জেনে নিন ব্যাংক চেকের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন

ভূমিকা

আজকাল ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় টাকা-পয়সা লেনদেনে চেক ব্যবহৃত হয় এবং এই ব্যবস্থাপনায় চেক ব্যবহারের প্রবণতা গ্রাহক ও প্রদায়কদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। চেক এর মাধ্যমে লেনদেন বিভিন্ন নিয়ম-কানুন রয়েছে যা আমাদের জেনে রাখা দরকার । আর এই চেক নিয়ে বিভিন্ন ঘটনার আলোকপাত করা হলো- 
 
know-the-rules-of-bank-cheques-in-bangladesh
Image source : pixahive

চেক কি?

চেক টাকার মতোই বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র গ্রহণযোগ্য। আমানতকারী নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদানের জন্য তার ব্যাংকারের প্রতি যে শর্তহীন আদেশপত্র লেখে তাই চেক। আইন অনুযায়ী ব্যাংক চেক প্রদর্শনমাত্র তার মক্কেলকে টাকা প্রদানে বাধ্য। চেক হল ব্যাংকের প্রতি টাকা প্রদানের শর্তহীন লিখিত ও দস্তখতকৃত আদেশনামা। 
 

চেকের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন

আমানতকারী ঠিকমতো চেকটি পূরণে ব্যর্থ হলে ব্যাংক টাকা দেবে না। অতএব, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চেক প্রস্তুত করতে হবে। 
 
১, চেকের লেখককে প্রথমেই লক্ষ্য রাখতে হবে চেকে হিসাবের নম্বর লিখা হয়েছে কি না। যদি না লেখা থাকে তবে লেখককে তা পূরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, চলতি হিসাবের চেকে সঞ্চয়ী হিসাবের নম্বর লিখা যায় না। তা করলে ব্যাংক ওই চেক বাতিল করে দেবে এবং টাকা দেবে না। 
 
২. চেকে যে তারিখ লেখা সে তারিখের আগে চেকের টাকা ব্যাংক থেকে ওঠানো যাবে না। তবে চেক লেখার তারিখ থেকে পরবর্তী ৬ মাস পর্যন্ত চেকটি বৈধ থাকে। ৬ মাস পরের চেক প্রস্তুতকারীর অনুমোদন না দিলে ব্যাংক টাকা দেবে না। চেকে পূর্ববর্তী তারিখ থাকলে অসুবিধা হয় না। কিন্তু পরবর্তী তারিখ থাকলে ব্যাংক টাকা প্রদানে বাধ্য নয়। 
 
৩. চেক লেখকের কাজ হল প্রাপকের নাম লেখা, টাকার পরিমাণ লেখা, নমুনা দস্তখত করা। চেকের লেখায় কোনও প্রকার কাটাকাটি করা যাবে না। কোনও প্রকার কাটাকাটি হলে প্রস্তুতকারককে সেখানে তার নমুনা স্বাক্ষর দিতে হবে। 
 

বিভিন্ন প্রকার চেক

বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম বেশ কয়েক প্রকার চেক প্রচলিত রয়েছে। এদের মধ্যে বাহক চেক, হুকুম চেক, দাগকাটা চেক, খোলা চেক, নিরস্ক চেক, অগ্রিম তারিখের চেক, পূর্ব তারিখের চেক, বাসি চেক, প্রত্যায়িত চেক, মার্কেট চেক অগ্রগণ্য।
 
বাহক চেক: যে চেকের টাকা যে কোনও ব্যক্তি ব্যাংকে উপস্থাপন করে সংগ্রহ করতে পারে তাই বাহক চেক। বাহক চেক হস্তবদল দ্বারাই অবাধে হস্তান্তর যোগ্য। এ চেকের মাধ্যমে অধিক টাকা লেনদেন করা যায় না। 
 
হুকুম চেক: আবার যে চেকে প্রাপকের নাম লেখা থাকে এবং নামের শেষে 'অথবা আদেশ অনুসারে' কথাটি লেখা থাকে তাকে হুকুম চেক বলে। প্রাপক ব্যাংকের পরিচিত না হলে এ চেকের টাকা সরাসরি ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা যায় না। প্রাপকের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হয়।

ফাঁকা চেক: আবার যে চেকে কারও নাম লেখা বা দাগকাটা থাকে না তাই খোলা চেক। এই চেক অবাধে হস্তান্তর করা যায় এবং যে কোনও ধারক একে আদেশ চেকে রূপান্তর করতে পারে। অনেক সময় চেক রূপান্তর করতে পারে। অনেক সময় চেক লেখক চেকে টাকার অংক উল্লেক করেন না, এই ধরনের চেক হল ফাঁকা চেক। 
 
পূর্ব তারিখের চেক: আবার চেক প্রস্তুতের তারিখের পূর্ববর্তী কোনও তারিখ লিখা হলে সেই চেক পূর্ব তারিখের চেক বলে গণ্য হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই চেক উপস্থিত করলে ব্যাংক টাকা প্রদান করবে। 
 
মেয়াদ উত্তীর্ণ চেক: সাধারণত একটি চেক প্রস্তুতের তারিখ থেকে ৬ মাস বা ১৮০ দিন পর্যন্ত বৈধ থাকে। ওই তারিখের পর চেকটি মেয়াদ উত্তীর্ণ চেক হিসেবে গণ্য হয়। একই চেককে বৈধ চেকে পরিণত করতে হলে তারিখ কেটে প্রস্তুতকারকদের দস্তখত দিয়ে নতুন তারিখ বসাতে হবে। 
 
মার্কেট চেক: ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য ও অধিক বিশ্বস্ত গ্রাহককে ব্যাংক বিশেষ ক্ষমতায় এক ধরনের চেক প্রদান করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ চেক প্রচলিত আছে এ চেক গ্রাহকেরা বাজার থেকে দেশ-বিদেশ সর্বত্র ভ্রমণে ব্যবহার, করতে পারেন। সহজ কথায় একে মার্কেট চেক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে বিভিন্ন ব্যাংক এই পদ্ধতিকে গোল্ডকার্ড, মাস্টারকার্ড, সিলভারকার্ড, ক্রেডিটকার্ড হিসেবে প্রচলিত করছে। 
 
হারানো চেক: চেক প্রস্তুতের পর ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের আগে হারিয়ে গেলে হারানো চেক বলে বিবেচিত হয়। আইনানুযায়ী হারানো চেক কেউ পেলে সে ওই চেকের প্রকৃত মালিকানা পায় না। এ অবস্থায় ব্যাংককে জানালে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যাংক আগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ