Image is AI-generated from Fotor |
সূচনা
পারমাণবিক বোমা কতটা ভয়াবহ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিরোশিমা ও নাগাসাকি । যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর প্রথম আণবিক (Atomic) বোমা নিক্ষেপ করে দুটো শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল । আগষ্ট মাস আসলেই প্রতিবছর মানবতা বিরোধী সেই ধ্বংসলীলার বিরুদ্ধে শান্তিবাদী মানুষেরা সোচ্চার হয় । নিম্নে পরমাণু অস্ত্রের আদি-অন্ত তথ্য সহকারে উপস্থাপন করা হলো ।
পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার
১৯০৫ সালে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিকতার সূত্রে ভর ও শক্তির মধ্যকার সম্পর্কটিকে প্রকাশ করলেন এভাবে- E=mc2 । অর্থাৎ খুব অল্প পরিমাণ পদার্থ থেকে বিপুল পরিমাণ শক্তি পাওয়া সম্ভব । ১৯০৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড অণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন ।এরপর ১৯৩৯ সালে জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রিৎজাস্ট্রাসম্যান এবং অটোহ্যান আবিষ্কার করলেন, ইউরোনিয়াম অণুকে দুই ভাগে ভেঙে শক্তি উৎপন্ন করা সম্ভব । এ পদ্ধতিকে বলা হলো পারমাণবিক ফিশন । অতঃপর ধারাবাহিক আবিষ্কার, গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মানুষের হাতের মুঠোয় এলো আণবিক শক্তি । তৈরি হলো পারমাণবিক বোমাও । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বিজ্ঞানীরা আণবিক অস্ত্র তৈরির ব্যাপারে এগিয়ে আসেন । আণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্তটি নেয়া হয় ১৯৪১ সালের ৬ ডিসেম্বর । বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কাঙ্ক্ষিত সফল ‘আণবিক বোমা’ তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয় । ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের মরুভূমি অ্যালামোগোরডোতে ভোর রাতে ‘ট্রিনিটি’ নামের বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয় ।
পরমাণু বোমা : ফিউশন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তৈরি বোমা ।
বোমা তৈরি করা হয় : ইউরোনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম দিয়ে ।
আবিষ্কারক : রবার্ট ওপেন হাইমার । যুক্তরাষ্ট্র ম্যানহাটান প্রজেক্ট চালু করে : ১৯৪২ সালে ।
পরমাণুবাদের জনক : ডেমোক্রিটাস পারমাণবিক পদার্থবিদ্যার জনক : আরনেস্ট রাদারফোর্ড ।
হিরোশিমা-নাগাসাকির ধ্বংসলীলা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল, ১৯৪৫ সালের ৬ আগষ্ট আমেরিকান সেনা জাপানের শহর হিরোশিমাতে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫মিনিটে ‘লিটল বয় (Little Boy)’ নামক বোমাটি ভূমির ৫৮০মিটার বা ১৯০০ফুট উপর হতে প্যারাসুট দ্বারা নিক্ষেপ করে ।বিস্ফোরিত হওয়ার মুহূর্তেই ৬০-৮০হাজার মানুষ মারা যায় এবং চুড়ান্ত মৃত্যের সংখ্যা ছিল ১লক্ষ ৪০ হাজার । এই বিস্ফোরণটি শহরের দশ বর্গকিলোমিটার (ছয় বর্গমাইল) এর বেশি ধ্বংস করে এবং বিস্ফোরণের তীব্র উত্তাপের ফলে প্রচুর আগুনের সূত্রপাত ঘটেছিল যা হিরোশিমা গ্রাস করে এবং তিন দিন ধরে স্থায়ী ছিল ।
৯ আগষ্ট আমেরিকান বাহিনী ‘ফ্যাটম্যান’ নামক দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা কোকুরায় () ফেলতে চেয়েছিল তবে মেঘে আচ্ছন্ন অস্পষ্টতার জন্য ব্যর্থ হয়ে নাগাসাকি নামক গুরুত্বপূর্ণ বন্দরটিতে নিক্ষেপ করা হয় ।বিস্ফোরিত হওয়ার মুহূর্তেই ৪০হাজার মানুষ মারা যায় এবং চুড়ান্ত মৃত্যের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০হাজার ।
জাপান-মার্কিন যুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ফেলার আগেই মার্কিন বাহিনীর অবস্থানে শক্তিশালী ছিল এবং জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল । তারপরও প্রথম অতঃপর দ্বিতীয় বোমাটি নিক্ষেপে বিপুল প্রাণনাশ ও তীব্র ধ্বংসাযজ্ঞ চালনার জন্য মার্কিনীরা সমালোচিত ও নিন্দীত । অবশেষে ১৪ আগষ্ট জাপানী সৈন্য বাহিনী আত্মসমর্পন করে ।তবে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসকিতে কেন পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়, এর একটা কারণ হতে পারে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর আমেরিকান সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের একটি উপায় ছিল । যাইহোক, হিরোশিমা-নাগাসকি ট্রাজিডির সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও পরিসমাপ্তি ঘটে ।
বিশ্বে পরমাণু বোমার অধিকারী দেশ :
বর্তমানে পরমাণু বোমার অধিকারী দেশ হচ্ছে ৯টি – যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, ইসরাইল ও উত্তর কোরিয়া । পূর্বে পরমাণু বোমার অধিকারী থাকলেও পরবর্তীতে পরমাণু বোমা ত্যাগকারী দেশ হচ্ছে ৫টি – বেলারুশ, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, ইউক্রেন ও দক্ষিণ আফ্রিকা ।
রেফারেন্স সমূহ : https://www.bbc.co.uk/history/ww2peopleswar/timeline/factfiles/nonflash/a6652262.shtml
https://www.history.com/news/hiroshima-nagasaki-second-atomic-bomb-japan-surrender-wwii
https://en.wikipedia.org/wiki/Atomic_bombings_of_Hiroshima_and_Nagasaki
https://www.washingtonpost.com/opinions/five-myths-about-the-atomic-bomb/2015/07/31/32dbc15c-3620-11e5-b673-1df005a0fb28_story.html
https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_nuclear_weapons
0 মন্তব্যসমূহ