গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে কাঁঠাল এর রসালো কোষ ও চমৎকার স্বাদ-গন্ধের জন্য খুবই জনপ্রিয় । ফলটিতে চমৎকার স্বাদ ও সুগন্ধের পাশাপাশি মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নানাবিধ পুষ্টিগুণ রয়েছে । কাঁঠালে বিদ্যমান নানা ভিটামিন ও মিনারেলস বা খনিজ পদার্থ আমাদের স্বাস্থ্যের নানারকম উপকার সাধন করে । গুণগত কিংবা ব্যবহারিক দিক থেকেও কাঁঠাল অপরাপর বিদেশী ফলের চেয়ে উপকারী। কাঁচা অথবা পাকা যা-ই হোক না কেন, দুই অবস্থায়ই খাদ্য হিসেবে সমান উপাদেয়। চৈত্রসংক্রান্তির চিরায়ত গ্রামীণ প্রথার অনুষঙ্গও কাঁচা কাঁঠাল আর কাঁঠালের বিচি। শুধু ফল নয়, তরকারি হিসেবেও কাঁঠালের রয়েছে আলাদা সুখ্যাতি।
Image by tichanett from Pixabay |
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ জোনাথান ক্রেন বলেন, কাঁঠালগাছ বহুবর্ষজীবী হওয়ায় এটি প্রতিবছর রোপণের প্রশ্ন আসে না। গ্রীষ্মকালীন একেকটা গাছে ১৫ থেকে ২০ বছর যাবৎ ফল ধরে। তা ছাড়া কোনো কোনো গাছে বছরে ১৫০ থেকে ২০০টি কাঁঠাল ধরে।
বিভিন্ন দেশে কাঁঠাল যে নামে পরিচিত:
থাইল্যান্ডে - কানুন
মালয়েশিয়ায় - নাংকা ।
আরবি - আলাখায়া (الكاكايا)
তুর্কী - নেফেসি
হিন্দি - কঠাল (कटहल)
কাঁঠালের পুষ্টিমানঃ
কাঁঠালের পুষ্টিগুণও অনেক। এটি উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ। আর প্রতি আধা কাপ কাঁঠালের পুষ্টিমান প্রায় ৯৫ ক্যালরি, যার মাত্রা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের প্রধান খাবারের (ভাত বা অন্যান্য শস্যকণা) চেয়ে কম।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পুষ্টিমান হিসেবে, মোট কার্বোহাইড্রেট ২৪ গ্রাম, বায়াটারি ফাইবার ২ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, ভিটামিন এ ২১৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬.৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০৩ মিলিগ্রাম এবং ক্যালরি পাওয়া যায় মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৯৪ মিলিগ্রাম, খনিজ পদার্থ-১.১ গ্রাম, কিলোক্যালরী-৪৮ মাইক্রোগ্রাম, আমিষ ১.৮ গ্রাম, শর্করা-৯.৯ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২০ মি. গ্রাম, লৌহ-০.৫ মি.গ্রাম, ভিটামিন সি-২১ মি.গ্রাম, ক্যারেটিন-৪৭০০ মি.গ্রাম, ভিটামিন বি ১-০.১১ মি. গ্রাম, ভিটামিন বি২- .১৫ গ্ৰাম, আঁশ-০.২ গ্রাম, চর্বি-০.১ গ্রাম, জলীয় অংশ-৮৮ গ্রাম।
কাঁঠালের উপকারিতাঃ
কাঁঠাল পুষ্টি সমৃদ্ধ। এতে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিন সহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান । অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী।
Image by LoggaWiggler from Pixabay |
১। শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করাঃ এটি কাঁঠালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। এতে থাকা ভিটামিন সি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে এবং রক্তের শ্বেতকনিকার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দৃঢ় করে ।
২। নানা ক্যান্সার থেকে দেহকে প্রতিরোধ করে যেমনঃ কাঁঠালে রয়েছে lignans, saponins ও isoflavones নামক ফাইটোনিউট্রিঅ্যান্ট অর্থাৎ এই পদার্থগুলোতে স্বাস্থ্য রক্ষার গুণাবলী রয়েছে। এই পদার্থগুলোর রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক । কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, মুখ গহ্বরে ক্যান্সার, প্রোসট্রেট ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার ।
৩। দেহের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ কাঁঠাল দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। কাঁঠালে থাকা ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ চমৎকারভাবে দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে রক্তের সুগারের মাত্রা কোন রকম না বাড়িয়েই ৷ ৪। কাঁঠাল ত্বকের বলিরেখা বা বয়সের ছাপ কমাতে সহায়তা করে । কাঁঠালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বয়ঃবৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর করে ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ দেখা যায় না । তাই ত্বকের বয়স ধরে রাখতে অর্থাৎ চেহারায় লাবন্য দীর্ঘস্থায়ী করে কাঁঠাল ।
৫। হজমে সাহায্য করেঃ হজমের ক্ষেত্রে কাঁঠালের অনেক উপকারি ভূমিকা রয়েছে। এর আলসার প্রতিরোধক গুনাগুনের জন্য এটি আলসার প্রতিরোধ করতে পারে এবং হজমের সমস্যা দূর করে। এছাড়া কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থাকলে কাঁঠাল খেলে তা অন্ত্রের চলাচল সহজ করে।
৬। কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ নিতান্ত কম। এই ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কম ।
৭। কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন এ আছে যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে ৷
৮। উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ কাঁঠাল পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। যারা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ জন্যে কাঁঠালে উচ্চরক্তচাপের উপশম হয়। উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
৯। অ্যাজমা প্রতিরোধ করেঃ কাঁঠালের স্বাস্থ্য উপকারিতার মাঝে রয়েছে অ্যাজমা প্রতিরোধের গুণাবলী। গবেষণায় বলা হয়ে থাকে যদি কাঁঠালের শিকড় এবং এর নির্যাস ফুটিয়ে পানিটা খাওয়া হয় তাহলে অ্যাজমা প্রতিরোধ সম্ভব। ১০। গর্ভবতী মা প্রতিদিন ২০০ গ্রাম পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভস্থ শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয় এবং গর্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিক ভাবে হয়। স্তন্যদায়ী মায়ের দুধের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।
১১। গর্ভবতী নারীদের প্রয়োজনে- কাঁঠালে থাকা পুষ্টি উপাদান গর্ভধারণ ও স্তন্যদানকালে বেশ উপকারি। এতে থাকা নায়াসিন গর্ভবতী নারীদের শক্তি বৃদ্ধি করে, হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ১২। হাড়কে মজবুত করে- কাঁঠালে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম যা ক্যালসিয়াম শোষণ করে। আর ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনকে মজবুত করে এবং হাড়ের বিভিন্ন রোগ যেমন অস্টিওপেরোসিস, আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। ১৩। ৬ মাস বয়সের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে কাঁঠালের রস খাওয়ালে শিশুর ক্ষুধা নিবারণ হয়। অন্যদিকে তার প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়। ১৪। রক্তস্বল্পতা রোধেঃ কাঁঠালে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, কে, নিয়াচিন, ফলেট, ভিটামিন বি-৬, এছাড়াও আছে বিভিন্ন ধরণের মিনারেল যেমনঃ কপার, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। তাই এটি রক্তস্বল্পতা রোধে দারুণ ভুমিকা রাখে। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্যে কাঁঠাল উপকারি হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
১৫। চোখ ভাল রাখেঃ ভিটামিন 'এ' চোখের জন্যে খুবই উপকারী একটি ভিটামিন। আর কাঁঠালে এই ভিটামিনটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়া যেহেতু কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, তাই এর ফলে চোখের রেটিনাও সুস্থ থাকে। যারা চোখ সুস্থ রাখতে চান তারা অনায়াসে কাঁঠাল খেতে পারেন।
১৬। পাইলস ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলনের বিষাক্ততা পরিষ্কার করে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। আর কাঁঠালে থাকা উচ্চ আঁশ কোষ্ঠ্যকাঠিন্য প্রতিরোধ করে পাইলসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
১৭। থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেঃ কাঁঠাল হচ্ছে কপারের একটি খুব ভালো উৎস ফলে এটি থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণে ভালো ভূমিকা রাখে । তাই থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে যেকোনো কড়া ঔষধ খাওয়ার আগে কাঁঠাল খেয়ে দেখতে পারেন ।
১৮। রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করেঃ কাঁঠাল রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে এবং এটি দেহের সর্বত্র রক্ত চলাচলে সাহায্য করে।
১৯। কাঁঠালের অন্যতম উপযোগিতা হল ভিটামিন সি। প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন “সি” তৈরি হয় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে ভিটামিন “সি”। চুল ভালো রাখার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
২০। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও আমাদেরকে সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে ।
২১। কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি৬ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
২২। কাঁঠালে রয়েছে খাদ্যআঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এই ফল আঁশালো হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ।
২৩। চর্মরোগের সমস্যা সমাধানেও কাঁঠালের শেকড় কার্যকরী। জ্বর এবং ডায়রিয়া নিরাময় করে কাঁঠালের শেকড় ।
২৪। টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকরী
২৫। চর্মরোগের সমস্যা সমাধানেও কাঁঠালের শেকড় কার্যকরী। জ্বর এবং ডায়রিয়া নিরাময় করে কাঁঠালের শেকড়।
২৬। কাঁঠালে আছে বিপুল পরিমাণে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
২৭। কাঁঠালে বিদ্যমান প্রোটিন দেহের কোষ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
২৮। বদহজম রোধ করে কাঁঠাল।
২৯। কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা দাঁত, মাঢ়ি ও মুখের ঘা জাতীয় রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৩০। কাঁঠালে চর্বি থাকলেও পরিমানে খুব কম থাকায় ওজন বৃদ্ধির আশংকা নেই বললেই চলে৷
৩১। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর ফ্রির্যাডিকেলস দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখে ।
৩২। ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল করতেও কাঁঠালের ভূমিকা রয়েছে । ৩৩। এতে উপস্থিত খনিজ উপাদান রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও কাঁঠাল ভূমিকা রাখে ।
কাঁঠাল বিচির বিস্ময়কর পুষ্টিমান ও ব্যবহারঃ
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা- কাঁঠালের কোন কিছুই ফেলনা নয়।কাঁঠাল বিচি ফেলে না দিয়ে মিহি গুঁড়ো করে মধু আর দুধের সাথে মিলিয়ে মাস্ক বানিয়ে মুখে দিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখের বলিরেখা কমে যাবে।
অন্যান্য উপকারিতা- কাঁচা কাঁঠাল ও এর বিচিতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার শ্বেতসার, আমিষ ও খনিজ পদার্থ। কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে
বিভিন্ন ধরনের তরকারি রান্না করে আর এর শুকনো বিচি ভেজে বিকেলে চায়ের সাথে খাওয়া যায় আবার তরকারি রান্না করেও খাওয়া যায়।
Image by Carl Rubino from Pixabay
পুষ্টিমানঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে শক্তি পাওয়া যায় ৯৮ ক্যালরি। এতে কার্বোহাইড্রেট ৩৮.৪ গ্রাম, প্রোটিন ৬.৬ গ্রাম, ফাইবার ১.৫ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.০৫ থেকে ০.৫৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.১৩ থেকে ০.২৩ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম, ৪.০৭ মিলিগ্রাম রয়েছে। কাঁঠালের বিচি ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস। এছাড়াও আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, থায়ামিন, নায়াসিন, লিগন্যান, আইসোফ্ল্যাভোন এবং স্যাপোনিনের মতো ফাইটো ক্যামিক্যালস ৷
উপকারিতাঃ
খাবার হিসেবে যেমন সুস্বাদু ও পুষ্টিমানে ভরপুর তেমনই এর রয়েছে স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব।
১। কাঁঠালের বিচিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্টগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং বার্ধক্যের প্রভাব সৃষ্টিকারি উপাদানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে ।
২। ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এর কারণে এর গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম। ফলে এটি ওজন কম বাড়িয়েই জুগাতে পারে অনেক এনার্জি৷
৩। কাঁঠালবিচির প্রোটিন অত্যন্ত উপকারি। মাছ, মাংস যাদের কম খাওয়া হয় তাদের জন্য আমিষের চাহিদা মেটাতে কাঁঠাল বিচি উৎকৃষ্ট খাবার।
৪। কাঁঠালবিচির জীবানুনাশক গুনও রয়েছে। এটি Escherichia coli ও Bacillus megaterium ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর এবং এতে থাকা বিশেষ উপাদান (Jacalin) এইডস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়নে সফল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
৫। এতে থাকা পটাশিয়াম ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে রাখে ।
আয়ুৰ্বেদিকগুণঃ
বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র নানা অসুখের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে কাঁঠালের বিচি।
১। কাঁঠালের বিচি বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
২। এটি হজম শক্তি বাড়ায়।
৩। কাঠালের বিচি হলো aphrodisiac অর্থাৎ এটি যৌন আনন্দ বাড়ায়।
৪। ধারণা করা হয় কাঁঠালের বিচি টেনশন ও নার্ভাসনেস কাটাতে উপকারি ।
৫। এ্যালকোহল জাতীয় মাদকের প্রভাব দূর করার জন্যও এর ব্যবহার রয়েছে।
আমাদের মতো দেশের যেখানে একটা বড় গোষ্ঠী পুষ্টিচাহিদা মেটাতে অক্ষম সেখানে পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কাঁঠালের বিচি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখতে পারে। সংরক্ষণযোগ্য বলে সারাবছরই এই পুষ্টি গ্রহণ করা সম্ভব। তাই কাঁঠাল খাওয়ার পর বিচিগুলোকেও সংরক্ষণ করুন আর গ্রহণ করুন এর পুষ্টিমান। প্রিয়, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, সুস্থ থাকুন । কাঁঠালের খোসা ও ভুতি গবাদি পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কাঁঠালের পাতা ছাগলের অত্যন্ত পছন্দের খাবার । কাঁঠালের পোড়া পাতার ছাইয়ের সাথে ভুট্টা ও নারকেলের খোসা একসাথে পুড়িয়ে নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ঘা বা ক্ষতস্থানে লাগালে তা দ্রুত শুকিয়ে যায়। কাঁঠালগাছের কাঠের গুঁড়া কাপড় রাঙানোর রং তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কাঁঠালগাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত, মজবুত ও উন্ন ধরনের কাঠ। এ কাঠ আসবাবপত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয় । কাঁঠাল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। বসন্তকাল থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত কাঁচা কাঁঠাল ইচোড়' সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।
পাকা ফলের কোষ সাধারণত খাওয়া হয়, এই কোষ নিঙড়ে রস বের করে তা শুকিয়ে আমসত্বের মত ‘কাঁঠালসত্ব’ও তৈরি করা যায়। এমনটি থাইল্যান্ডে এখন কাঁঠালের চিপস্ তৈরি করা হচ্ছে। কোষ খাওয়া পর যে খোসা ও ভুতরো ( অমরা ) থাকে তা গবাদি পশুর একটি উত্তম খাদ্য। ভুতরো বা ছোবড়ায় যথেষ্ট পরিমাণে পেকটিন থাকায় তা থেকে জেলি তৈরি করা যায়।
0 মন্তব্যসমূহ