Image by Bruno /Germany from Pixabay |
অধিক লবণ গ্রহণের ফলে আমরা যে সকল রোগে
ভুগে থাকি, তার বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলো:
উচ্চ রক্তচাপ :
সারা বিশ্বে ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগের জন্য উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম একটি প্রধান ঝুঁকি। উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ অধিক লবণ গ্রহণ। বিশ্বের যে সব জনগোষ্ঠি লবণ কম খায় তাদের শতকরা ৮০ ভাগের উচ্চ রক্তচাপ থাকে না। উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ অধিক লবণ গ্রহণের ফলে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। লবণ কম গ্রহণ করলে রক্তচাপ কম হয় এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি দীর্ঘদিন যাবত লবণ কম গ্রহণ করলে তা বৃদ্ধ বয়সে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাচ্চাদের কোনোভাবেই অধিক লবণ খেতে দেয়া যাবে না। কারণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি শৈশব থেকেই শুরু হয়। বিশ্বে প্রতি বছর উচ্চ রক্তচাপে ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। এই মৃত্যুর ঝুঁকি কম লবণ গ্রহণ করে অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
স্ট্রোক :
প্রাপ্তবয়স্কদের শারীরিক অক্ষমতা এবং পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে
বড় কারণ স্ট্রোক । বিশ্বে প্রতি বছর স্ট্রোকে প্রচুর লোক মারা যায়।
স্ট্রোকের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। উচ্চ
রক্তচাপের কারণে শতকরা ৬৪ ভাগের স্ট্রোক হয়ে থাকে। সুতরাং অতিরিক্ত লবণ
গ্রহণ স্ট্রোকের জন্য সরাসরি দায়ী। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সকল
প্রকার স্ট্রোকের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুতরাং লবণ কম
গ্রহণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রেখে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব ।
হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিওর :
করোনারি হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং হার্ট হওয়ার
প্রধানতম কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের ফলে হার্ট
ফেইলিওর হতে পারে যা হার্টের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের
ফলে আমাদের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিওরের
ঝুঁকি বেড়ে যায়। লবণ কম গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে,
ফলশ্রুতিতে হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি কমে।
অস্টিওপোরোসিস:
হাড়ের কার্যক্ষমতার জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য উপাদান।
হাড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে লবণ গ্রহণের একটা বিরাট ভূমিকা
আছে। অধিক লবণ গ্রহণ প্রস্রাবের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম নির্গমন বাড়িয়ে
দেয়। ফলে আমাদের হাড়ের ক্যালসিয়াম ক্ষয়ে হাড় পাতলা হয়ে যায় যাকে
অস্টিওপোরোসিস বলে ।
পাকস্থলীর ক্যান্সার :
অধিক লবণ গ্রহণের ফলে
পাকস্থলীর ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফলশ্রুতিতে Helicobacter Pylori নামে এক
নতুন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইনফেকশন হতে পারে; যার দরুণ পাকস্থলীর আলসার এবং
পাকস্থলীর ক্যান্সার হয়। যে সব দেশের জনগোষ্ঠী বেশি লবণাক্ত খাদ্য গ্রহণ
করে, তাদের মধ্যে পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতার হার অধিক থাকে ।
কিডনির রোগ:
উচ্চ রক্তচাপ মূত্রে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যা কিডনির
কার্যক্ষমতা হ্রাস করার জন্য একটা প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান । যারা কিডনি
রোগী, অধিক লবণ গ্রহণ তাদের রোগকে বাড়িয়ে দেয়। যেহেতু অতিরিক্ত লবণ
গ্রহণ পস্রাবের মাধ্যমে ক্যালসিয়ামের নির্গমন বাড়িয়ে দেয় সেহেতু
অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের কারণে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এছাড়া অধিক লবণ গ্রহণে শারীরিকভাবে স্থুল (obesity) হওয়ার প্রবণতা বাড়ে
এবং অ্যাজমার উপসর্গসমূহ বৃদ্ধি পায়।
কিভাবে আমরা অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করি :
আমাদের খাদ্যাভ্যাসে কিছু বিষয় অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে।
যা নিছক অভ্যাস! কিংবা শখ! যেমন-টেবিলে লবণদানি রাখা। ভাত-তরকারীর সাথে
একটু আলগা লবণ অধিকাংশ লোকেরই খুব পছন্দ। অনেকে আবার খাওয়া শুরু করার
পূর্বেই জিহ্বাতে একটু লবণ দিয়ে নেয়। তরকারী রান্না করার সময় একটু যেন
বেশিই আমরা লবণ ব্যবহার করে থাকি। এছাড়া খাবারকে সুস্বাদু করার জন্য আমরা
বিভিন্ন ধরনের উপাদান যেমন- কেচাপ ।
0 মন্তব্যসমূহ