কেমন হবে যদি আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসটি উইন্ডোজ পিসির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন? হ্যাঁ, এই প্রশ্নটি মাথায় আসেছিল যখন আমার শখের ল্যাপটপটি পড়ে নস্ট হয়ে গেল । তখন হঠাৎ করে ল্যাপটপ রিপেয়ার বা নতুন ল্যাপটপ কেনার এত্ত টাকা পাবো কোথায়! আমার অফিসিয়েল কাজ কর্ম লেখালেখি, এক্সেল, স্লাইড তৈরি করার জন্য পুরাতন অ্যান্ড্রয়েড POCO M3 ফোনটি ব্যবহার করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না । তো চলুন আজকে আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানাবো কিভাবে আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসকে সম্পূর্ণরূপে উইন্ডোজ পিসি বা কম্পিউটারে ট্রান্সফর্ম করবেন ।
Image by StockSnap from Pixabay |
প্রথমে, অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে ডেস্কটপ সেটাপ এর যেসমস্ত গ্যাজেটসমূহ লাগবে:
মোবাইল স্ট্যান্ড : আপনার ডিভাইসটি যেহেতু ডেক্সটপ মনিটর হিসেবে সেট করবেন তাই আপনার একটি মোবাইল স্ট্যান্ড এর প্রয়োজন হবে । বাজারে বিভিন্ন মানের মোবাইল স্ট্যান্ড পাওয়া যায় । এদের দাম শুরু ২০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ।
মাউস : পিসির মত মাউস দিয়ে কাজ করার জন্য দরকার হবে । বাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যেই অপটিকেল মাউস পেয়ে যাবেন ।
কিবোর্ড : দ্রুত টাইপ করার জন্য বাংলা কি-বোর্ড লাগবে । বাজারে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যেই কি-বোর্ড পাওয়া যায় ।
ওটিজি ক্যাবল : কি-বোর্ড, মাউস, পেনড্রাইভ ইত্যাদির সাথে আপনার মোবাইলে যোগসূত্র তৈরি করার জন্য ওটিজি ক্যাবল লাগবে । সাধারণত বাজারে ৩০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের ওটিজি ক্যাবল পাওয়া যায় ।
ইউএসবি হাব : ইউএসবি হাব প্রয়োজন হবে যদি আপনি মোবাইলে একই সাথে অনেকগুলো ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস যেমন- কি-বোর্ড, মাউস, পেনড্রাইভ, পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ, প্রিন্টার চালাতে চান ।আমি যেহেতু সাধারণত ওয়ারলেস কম্বো মাউস+কি-বোর্ড ব্যবহার করি তাই ওটিজি ক্যাবল দিয়েই কাজ চলে যায় । ইউএসবি হাব এর প্রয়োজন পড়ে না । ইউএসবি হাব এর দাম পড়বে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মত। ওয়ারলেস কম্বো মাউস+কিবোর্ড এর কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম পড়বে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে ।
আমার কাছে অবশ্য সমস্ত গ্যাজেটগুলো আগে থেকেই ছিল শুধুমাত্র ওটিজি ক্যাবল কিনতে হয়েছে ।
অ্যান্ড্রয়েডে উইন্ডোজ সেটআপ
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে অনেক ধরনের উইন্ডোজ স্ট্যামুলেটর ইউজ করা যায় কিন্তু সব ডিভাইসের সাথে কম্পিটিবল হয় না আবার হলেও পিসির উইন্ডোজ সফটওয়্যার স্ট্যামুলেটরে রান করতে পারে না; সমস্যা হয় । এর জন্য আমি যে বিকল্প পন্থা ব্যবহার করেছি সেটা হচ্ছে উইন্ডোজ লাঞ্চার ব্যবহার করা । অনেক ঘাটাঘাটির করে অনেকগুলো লাঞ্চার ইন্সটল-আনইন্সটল করার পর Win-X Launcher অ্যাপটিই ভালো লাগলো । অ্যান্ড্রয়েডে সবচেয়ে ভালো ও সেরা উইন্ডোজ টেন লাঞ্চার অ্যাপ হচ্ছে এটি এবং সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এতে কোনো বিজ্ঞাপন নেই! অ্যাডস ফ্রি ভার্সন : ডাউনলোড করুন অথবা গুগল প্লেস্টোর থেকে ইন্সটল করার পর আমরা এটিকে Settings > Home Screen > Default Launcher থেকে Win-X Launcher সিলেক্ট করে ডিফোল্ট লাঞ্চার হিসেবে সেট করতে হবে । এখন আপনার উইন্ডোজ ইন্টারফেস রেডি ।
মাইক্রোসফট অফিস
অফিসিয়েল কাজ যেমন-কম্পোজ, প্রেজেন্টেশন, এক্সেল সিট ইত্যাদি কাজ করার জন্য মাইক্রোসফট অফিস খুবই দরকারি টুলস । যার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ারপয়েন্ট ও এক্সেল এই তিনটি অ্যাপ প্লেস্টোর থেকে পেয়ে যাবেন ।
Image by Firmbee from Pixabay |
বিজয় বাংলা কি-বোর্ড
পিসিতে কি-বোর্ডের মাধ্যমে দ্রুত বাংলাতে টাইপিং এর জন্য বিজয় বাংলা কি-বোর্ড সবচেয়ে জনপ্রিয় ।আপনিও যদি আমার মত বিজয় বাংলা তে লিখতে অভ্যস্ত তাহলে অ্যান্ড্রয়েডে থেকে Bijoy Android Keyboard বিজয় এ নামের ফিজিক্যাল কি-বোর্ড অ্যাপটি ইন্সটল করতে হবে । কিন্তু বর্তমানে এটি গুগল প্লেস্টোর নেই । তবে এখান থেকে ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে পারেন । আর আপনি যদি অভ্র দিয়ে টাইপ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তাহলে রিদমিক কি-বোর্ড প্লেস্টোর থেকে ইন্সটল করতে পারেন । তারপর ডিফল্ট কিবোর্ড হিসেবে সেট করতে- Settings > Additional Settings > Languages and input > Current Keyboard অপশন থেকে বিজয় কিবোর্ড অথবা রিদমিক কিবোর্ড সিলেক্ট করুন ।
ব্রাউজার
মাইক্রাসফট এইজড : মাইক্রাসফট এইজড ডেক্সটপ কম্পিউটারের খুবই জনপ্রিয় একটি ব্রাউজার । চাইলে প্লেস্টোর থেকে ইন্সটল করতে পারেন । এখন ডেক্সটপ ব্রাউজার হিসেবে চেন্জ করতে অ্যাপটি অপেন করে Settings > General > Site display settings থেকে Show desktop site as default অপশন সিলেক্ট করতে হবে ।
গুগল ক্রম : গুগল ক্রম ডেক্সটপ হিসেবে ব্যবহার করতে হলে ব্রাউজার অপেন করে উপরে ডান পাশের সাইড বার থেকে Desktop site অপশনে ক্লিক করতে হবে ।
আউটলুক
আউটলুক হচ্ছে মাইক্রোসফট এর ই-মেইল পরিসেবা জিমেইল এর মত । তাছাড়া মাইক্রোসফট এর সমস্ত ফিচার ব্যবহার করতে আপনার একটি আউটলুক অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক। এটি গুগল প্লেস্টোরে Microsoft Outlook Lite নামে পাওয়া যাবে ।
ওয়ান ড্রাইভ
নিত্যপ্রয়োজনীয় ফাইল, ফটো, ডকুমেন্টস ইত্যাদি ক্লাউড স্টোরেজে ব্যাকআপ সেভ ও ব্যবহার করার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ান ড্রাইভ খুবই জনপ্রিয় । ইন্সটল করুন : গুগল প্লেস্টোর থেকে ।
সিকিউরিটি
মাইক্রাসফট ডিফেন্ডার : এটি হচ্ছে উইন্ডোজ পিসির সবচেয়ে বিশ্বস্থ অ্যান্টি ভাইরাস বা নিরাপত্তা অ্যাপ । আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ব্যক্তিগত ও অনলাইন নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে প্লেস্টোর হতে ইন্সটল করুন ।
উক্ত মেথডটি কাজে লাগিয়ে আপনি অ্যান্ড্রয়েডে উইন্ডোজ পিসির একটা ফিল পাবেন । তবে পুরোপুরি উইন্ডোজ পিসিতে ট্রান্সফর্ম করা সম্ভব নয় । তবে ছোট-খাটো কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন । আশাকরি, বিশেষ করে যেসকল স্টুডেন্ট নতুন কম্পিউটার ট্রেনিং করছেন বা শিখছেন, তাদের কাজে লাগবে ।
-বিপ্লব কর্মকার
0 মন্তব্যসমূহ