বাংলাদেশে প্রাণঘাতী রোগের তালিকায় অবস্থান চতুর্থ । এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে , প্রতি বছর ৪০ থেকে ৮০ লক্ষ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং ৩০-৪০ হাজার লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে । তাই আমাদের কিডিনি রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা দরকার এবং এ রোগের ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরী।
Image by mohamed Hassan from Pixabay |
বর্তমানে আমাদের দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা খুবই দ্রুতগতিতে বাড়ছে, যা আমাদের সাধারণ মানুষের মনে বেশি আতঙ্কের সৃষ্টি করছে ।
কিডনি কী এবং এর কাজ কী?
মানবদেহের অতিপ্রয়োজনীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম । মানবদেহের কোমরের কিছুটা ওপরে দুই পাশে দুটি কিডনি থাকে। পরিণত বয়সে, ৫-৬ সেমি চওড়া এবং ৩ সেমি পুরু হয় । একটি কিডনির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম । তবে বাম কিডনিটি ডান কিডনি অপেক্ষা একটু বড় ও কিছুটা ওপরে থাকে । এর কাজ ব্যাপক । যেমন-
- কিডনি আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয় । কিডনি অকেজো হলে শরীরে দূষিত পদার্থ জমে যায় । ফলে নানান উপসর্গ দেখা দেয় ।
- কিডনি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করে যা শরীরের অন্যান্য ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে । যেমন-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা, শরীরে রক্ত তৈরি করা । তাই কিডনি অকেজো হলে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায় ।
-কিডনি আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ইলেক্ট্রোলাইট (ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম)-এর সমতা রক্ষা করে । কিডনি কাজ না করলে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায় যেটা জীবনের জন্য ঝুকিপূর্ণ ।
কিডনি রোগের লক্ষণ :
কিডনি রোগ যেহেতু অনেক প্রকার সেহেতু এর লক্ষণও ভিন্ন ভিন্ন। কিডনি রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণ হচ্ছে হঠাৎ করে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাবে পরিমাণ ও সংখ্যার পরিবর্তন বিশেষ করে রাতে বেশি প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত এবং প্রোটিন যাওয়া, চোখের চারপাশে ও পায়ের গোড়ালিতে পানি জমা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা ও অস্বাভাবিক গন্ধ হওয়া, রক্তশূন্যতা বেড়ে যাওয়া, মাথাব্যথা ও শরীর চুলকানো, বমি বমি ভাব, প্রস্রাবের সঙ্গে পাথর বের হওয়া, হাত, পা মুখসহ সমস্ত শরীর ফুলে যাওয়া, গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশন রেট 90-এর কম হওয়া ।
কিডনি রোগের ধরন ও তার প্রতিকার
কিডনি রোগ সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে । যেমন-
১. একিউট কিডনি ইনজুরি (একেআই)
যেসব রোগী হঠাৎ করে কিডনি রোগে আক্রান্ত হন তাদের আমরা একিউট কিডনি ইনজুরি বলে থাকি । সময়মতো যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগের পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব । যেসব কারণে একিউট কিডনি ইনজুরি হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হলো-
-ডায়রিয়ার মাধ্যমে পানিশূন্যতা ।
- যে কোনো কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া।
- সেপটিক শক ।
- ভলটারিন জাতীয় ব্যথার ওষুধ এবং অ্যামাইনোগ্লাইকোসাইড জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন ইত্যাদি ।
এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের অনেক সময় সাময়িক ডায়ালাইসিসও লাগতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে তাদের কিডনি পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
২. ক্রনিক কিডনি ডিজিস (সিকেডি)
যেসব কিডনি রোগ ধীরে ধীরে (মাস বা বছরের মধ্যে) কিডনির ক্ষতি করে তাদের ক্রনিক কিডনি ডিজিস বলা হয় । দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ অথবা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস থাকার কারণে ক্রনিক কিডনি ডিজিস হতে পারে । এ রোগে আক্রান্ত রোগীর নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন । কিন্তু তাদের কিডনি পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না।
অনেক কিডনি রোগই প্রতিরোধ করা যায় । যেমন-যাদের ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা যদি নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে রাখেন তাহলে কিন্তু কিডনি রোগ অনেকাংমে এড়ানো যায় ।
আবার কিছু কিছু কিডনি রোগ হয় অনিয়ন্ত্রিত ওষধ সেবনের মাধ্যমে, যেমন আমাদের বেশিরভাগ মানুষেরই কিছু না কিছু পয়েন্ট পেইন থাকে, যার বেশিরভাগই বিভিন্ন ব্যায়াম এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব ।
আজকাল যেটি বেশি ভয়ের কারণ সেটি হচ্ছে, কেমিক্যালযুক্ত খাবার । আমরা যা-ই খাই না কেন, তা রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে গিয়ে পৌচ্ছায় এবং কিডনি তা ফিল্টার করে । এইসব দূষিত পদার্থ ফিল্টার করতে করতে একসময় বেচারা কিডনি নিজেই দুর্বল হয়ে যায় ।
যেসব খাবারে কিডনি ভালো থাকে
প্রতিদিন অন্তত 8 গ্লাস (2 লিটার) বিশুদ্ধ পানি পান করা । তবে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে অধিক পানি পান করা প্রয়োজন ।
প্রচুর ফল ও সবজি : দান বা বীজ জাতীয় খাদ্য খান যেমন ব্রেড, নুডুলস, বাদাম ইত্যাদি । সপ্তাহে অন্তত একটি কচি ডাবের পানি পান করুন । প্রতিদিন অন্তত চারটি থানকুনি পাতা খেতে হবে । শশা, তরমুজ, লাউ, বাঙ্গি, কমলালেবু, লেবু, মাল্টা, ডালিম, বীট, গাজর, আখের রস, বার্লি, পিয়াজ, সাজনা ইত্যাদি পরিমাণ মতো খেতে হবে ।
কিডনি রোগীর অবশ্য বর্জনীয় খাদ্যসমূহ
চকোলেট, চকোলেট দুধ, পনির, গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগীর মাংস, সস, পিচস, ব্রকলি, বাদাম, মাশরুম, মিষ্টি কুমড়া, পালংশাক, টমেটো, কলা, খেজুর ও আচার ।
-ডা. রাশেদুল হাসান
0 মন্তব্যসমূহ