Image source : Wikimedia |
গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বজুড়ে
১৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবি উচ্চশিক্ষা ও চাকরির লক্ষ্যে প্রতিবছর আইএলটিএস পরীক্ষায় অংশ নেন ।উচ্চশিক্ষা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে আইএলটিএস স্কোর থাকা বাধ্যতামূলক । এটি গ্রহনযোগ্যতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে টোফেল (TOFEL) এর চেয়ে এগিয়ে ।
পরীক্ষা পরিচালনা
ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ, বিট্রিশ কাউন্সিল ও আইডিপি অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে পরিচালনা করে আইইএলটিএস পরীক্ষা । এ পরীক্ষায় নীতি নির্ধারক কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হলেও বিশ্বব্যপী পরীক্ষা পরিচালনা ও শিক্ষার্থীদের কাছে তথ্য পৌচ্ছে দেওয়ার মূল ভূমিকা পালন করছে বিট্রিশ কাউন্সিল ও আইডিপি অস্ট্রেলিয়া । সারা বিশ্বে একই প্রশ্নপত্র ও অভিন্ন নিয়মে পরিচালিত হয় ।
কিছু ভুল ধারণা
অনেকেই মনে করেন আইইএলটিএস অনেক কঠিন একটি পরীক্ষা আসলে এটি ভুল ধারণা । ব্রিটিশ কাউন্সিল সূত্র মতে, ইংরেজিতে মোটামুটি দক্ষ হয়েও এ পরীক্ষায় ভালো স্কোর সম্ভব । যদিও যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যেভাবে আইইএলটিএস পরীক্ষা পরিচালিত হয় বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয় ।
পরীক্ষা পদ্ধতি
দুই মডিউলে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়া যায় । একাডেমিক এবং জেনারেল ট্রেনিং ।স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য একাডেমিক মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয় । কোনো কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হলে সাধারণত জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয় । এছাড়া সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি এবং ইমিগ্রেশনের জন্য জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে । আইইএলটিএস পরীক্ষায় বসার আগে জেনে নিন কোন মডিউলে আপনাকে পরীক্ষা দিতে হবে । দুটো পদ্ধতিতে পার্থক্য খুব সামান্য । আইইএলটিএস পরীক্ষায় দুই ধরনের মডিউলেই চারটি অংশ থাকে ।
১. লিসেনিং (Listening)
কথোপকথন শুনে বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হয় এ অংশে । চারটি বিভাবে মোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় । আপনাকে একটা প্যাসেজ ইংরেজিতে বাজিয়ে শোনানো হবে, আর সামনে থাকবে প্রশ্নপত্র, ঐ শোনার ভিত্তিতে আপনাকে উত্তর করতে হবে, কী বোঝানো হয়েছে ঐ অডিও টেপে । মোটামুটি ৩০ মিনিটের পরীক্ষা হয় । শেষ ১০ মিনিটে উত্তরপত্রে উত্তর লিখতে হয় । একটি বিষয় কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো হয় । কোনো অংশ না বুঝতে পারলে সেটা নিয়ে আর মাথা না ঘামানোই ভালো । কারণ, এতে পরবর্তী প্রশ্নগুলোর উত্তর বুঝতে না পারার ঝুঁকি থাকে । সঠিক উত্তর বেছে নেওয়া, সংক্ষিপ্ত উত্তর, বাক্য পূরণ ইত্যাদি নানা ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে ।
২. রিডিং (Reading)
অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মতে IELTS এর সবগুলো পার্টের মধ্যে এটি কঠিন মনে হয় । এখানে তিনটি বিভাগে ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় । সময় এক ঘন্টা । Reading-এ টেস্ট করা হয় একটা প্যাসেজ পড়ে বোঝার ক্ষমতা । আপনাকে বিশাল বিশাল তিন-চারটা প্যারাগ্রাফ দেয়া হবে, তার থেকে আপনাকে অত্যন্ত সিম্পল সিম্পল উত্তর দিতে হবে । কিন্তু ঐ সিম্পল সিম্পল উত্তরগুলো আপনি সহজে পারবেন না, যদি না
Kk প্যাসেজটা ঠিকমতো বুঝতে পারেন । প্যাসেজটা আপনি ঠিকমতো বুঝতে হলে আপনাকে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হবে, আর তাহলে বাকি প্যাসেজে সময় কমে আসবে ।
৩. রাইটিং (Writing)
এখানে যাচাই করা হয় আপনি কতটুকু কল্পনাশক্তি খাটাতে পারেন এবং একটা বিষয়ের উপরে লিতে পারেন । এক ঘন্টায় দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখেতে হবে । দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে প্রথম প্রশ্নের চেয়ে দ্বিগুণ নম্বর থাকে । এজন্য শুরুতেই দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর ভালোভাবে লিখেতে পারেন । প্রথম প্রশ্নটির উত্তর ভালোভাবে লিখতে পারেন । প্রথম প্রশ্নটিতে মোটামুটি ২০ মিনিট সময় দিতে পারেন । অন্তত ১৫০ শব্দের উত্তর লিখতে হবে । দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর দিতে ৪০ মিনিট নিতে পারেন । অন্তত ২৫০ শব্দ লিখতে হবে। শব্দসংখ্যা একটু বেশি হলে ক্ষতি নেই । কিন্তু কম হলে নম্বর কমে যাবে । প্রথম প্রশ্নটিতে সাধারণত কোনো চার্ট, ডায়াগ্রাম থাকে । এ থেকে নিজের কথায় বিশ্লেষণধর্মী উত্তর লিখতে হয় । দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে সাধারণত কোনো বিষয়ের পক্ষে, বিপক্ষে মত বা যুক্তি উপস্থাপন করতে হয় ।
৪. স্পিকিং (Speaking)
এখানে কোনো লেখালেখি নেই । আপনাকে নির্দিষ্ট দিনে পরীক্ষস্থলে (সাধরণত ব্রিটিশ কাউন্সিলে) যেতে হবে । সেখানে দু-তিনজন পরীক্ষকের সামনে আপনাকে বসতে হবে । তাঁরা আপনাকে বিভিন্নভাবে ইংরেজিতে প্রশ্ন করবেন, আপনি তাঁর উত্তর দিবেন । তিনটি অংশে মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা হয় । প্রথম অংশে পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়, যেমন-পরিবার, পড়ামোনা, কাজ, বন্ধু ইত্যাদি । চার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে উত্তর দিতে হয় । দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে এবং দুই মিনিট কথা বলতে হয় । এর আগে চিন্তা করার জন্য এক মিনিট সময় দেওয়া হয় । তৃতীয় অংশে চার থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য পরীক্ষকের সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট বিষযৈ কথোপকথন চালাতে হয় ।
প্রস্তুতি
আইইএলটিএস পরীক্ষা নিয়ে উৎকন্ঠার কিছু নেই । নিয়মিত প্রস্তুতি নিয়ে যথেষ্ট ভালো স্কোর করা সম্ভব । শুরুতেই আপনার লক্ষ্য ঠিক করে নিন । তবে ইংরেজিতে আপনার এত দিনকার য দক্ষতা, সে অনুযায়ীই লক্ষ্য ঠিক করবেন । রাতারাতি ভালো স্কোর করা সম্ভব নয় । আবার ইংরেজিতে আপনি যথেষ্ট দক্ষ হলেও কোনো প্রস্তুতি ছাড়া পরীক্ষা দিয়ে আশানুরূপ স্কোর করা সম্ভব নয় । রোজকার কাজের মধ্যেই অন্তত ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখুন এ জন্য । কত দিন ধরে প্রস্তুতি নেবেন,এটা আপনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে । অন্তত তিন মাস সময় হাতে রাখা ভালো । প্রশ্নপত্র সমাধান করাটা প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ । ঘড়ি ধরে প্রশ্নপত্র সমাধান করুন । সম্ভব হলে পরীক্ষার পরিবেশে একসঙ্গে সব অংশের পরীক্ষা দিন ।
Image by Hatice EROL from Pixabay |
আইইএলটিএস স্কোর স্কেল
আইইএলটিএস স্কোরসমূহের শুরু ১ থেকে ৯ পর্যন্ত । স্কোরগুলোর স্বীকৃতিস্বরুপ হচ্ছে-
ব্যান্ড ৯ - দক্ষ ব্যবহারকারী
ব্যান্ড ৮ - খুব ভালো ব্যবহারকারী
ব্যান্ড ৭ - ভালো ব্যবহারকারী
ব্যান্ড ৬- পর্যাপ্ত ব্যবহারকারী
ব্যান্ড ৫ - পরিমিত ব্যবহারকারী
ব্যান্ড ৪ - সীমিত ব্যবহারকারী
ব্যান্ড ৩ - অতিরিক্তমাত্রায় সীমিত ব্যবহারকারী
ব্যান্ড ২ - ব্যবহারকারী নয়
ব্যান্ড ১ - যারা অপ্রসঙ্গিক উত্তর দিয়েছে বা যারা Communicate ব্যর্থ হয়েছে
ব্যান্ড ০ - পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেনি/ উত্তর দেয়নি
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
-পরীক্ষার আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অনুমোদিত যে “রেজিস্ট্রেশন পয়েন্ট” থেকে ।
-পরীক্ষার্থীরা অনলাইনেও রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন । ফি পরিশাধ সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা অনলাইনেই পাওয়া যাবে ।
- রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক ।
পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ
ব্রিটিশ কাউন্সিলের তত্বাবধানে প্রতি মাসে তিনবার করে বছরে ৩৬ বার আইইএলটিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিথ হয় । আগে কোনো পরীক্ষার্থী আশানুরূপ ফল না পেলে পরে পরীক্ষা দিতে হতো প্রথম পরীক্ষার অন্তত তিন মাস পর । এখন নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীরা কাঙিক্ষত স্কোর পাওয়ার আগ পর্যন্ত যতবার খুশি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন ।
সাধারণত আইইএলটিএস ফল প্রকাশিত হয় পরীক্ষার ১৩ দিন পর । ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ফলাফল সংগ্রহ করা যাবে । এছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিল এর ওয়েব সাইট থেকে পরীক্ষার্থীর নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর তারিখ, জন্মতারিখ পরীক্ষা প্রদানের তারিখ এন্ট্রি করে সহজেই জেনে নিতে পারেন পরীক্ষার ফলাফল । আপনার পরীক্ষার ফলের ওপর কোন সন্দেহ থাকে তবে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ‘এনকুয়ারি অন রেজাল্ট’ এর জন্য আবেদন করতে পারেন ।
0 মন্তব্যসমূহ