অতিরিক্ত মানসিক টেনশন ও অশান্তির ফলে আমারা নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছু আমরা অনেক সময় যথাসময়ে স্মরণ করতে পারি না । ফলে মেজাজ হয়ে উঠে রুক্ষ । আজ আমরা জানবো মস্তিষ্ক প্রখর করার গবেষণাকৃত ৯টি টিপস ।
Image by mohamed Hassan from Pixabay |
১. মনকে সক্রিয় রাখুন এবং নিয়মিত মনকে ব্যায়াম করান :
শারীরিক কর্মব্যস্ততা এবং নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন যেমন শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে তেমনি নিয়মিত মানসিক অনুশীলন আপনার মনকে করে তোলে প্রখর এবং চটপটে (sharp and agile) । এক পরীক্ষায় দেখা গেছে আপনি যদি নিয়মিত কোন কিছু শিখতে থাকেন এবং নিজেকে কোনো চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করান তাহলে আপনার স্মৃতিশক্তি এবং ব্রেইন নিয়মিত বাড়তে থাকে ।একটি সচল মস্তিষ্ক নিয়মিতভাবে স্নায়ু সেলের সাথে অন্যান্য সেলের যোগাযোগ রক্ষা করে ফলে মস্তিষ্ক খুব সহজেই বিভিন্ন তথ্য ধরে রাখতে এবং উদ্ধার করতে সচেষ্ট হয় ।
নিজেকে নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে উপস্থাপন করতে নিম্নের পন্থাগুলো অনুশীলন করুন :
-নতুন নতুন যন্ত্র সঙ্গীত বাজানোর শিক্ষা গ্রহণ করুন ।
-কম্পিউটারের নতুন নতুন প্রোগ্রাম ও বিভিন্ন গেমস শিখুন ।
-বিভিন্ন শব্দজট, ক্রস-ওয়ার্ড ও পাজল অনুশীলন করুন ।
-বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্যদের সহিত যোগাযোগ বৃ্দ্ধি করুন ।
-নতুন নতুন শখের কাজ শুরু করুন (যেমন-হস্তশিল্প, চিত্র শিল্প, বাইকিং, পাখি দর্শন প্রভৃতি) ।
-নতুন একটি বিদেশী ভাষা শিক্ষা শুরু করুন ।
-স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেকে কোন কর্মে নিয়োজিত করুন ।
-বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে অবহিত থাকুন ।
-নিয়মিত বিভিন্ন বই, আর্টিকেল এবং অন্যান্য জিনিস পড়ৃন ।
এছাড়াও বিভিন্ন মানসিক উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী কর্মকান্ড, শিক্ষাদান, ক্লাস নেয়া এবং বই পড়া বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার কর্মকান্ডকে করে তোলে অধিক প্রখর ।
২. শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন :
গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন শারীরিক কর্মকান্ড মানসিক দুঃশ্চিন্তা হ্রাস করতে সাহায্য করে । নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন মস্তিষ্কসহ শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন কোষ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে । এছাড়া নিয়মিত অনুশীলন ব্যক্তিকে করে তোলে সতেজ, শক্তিশালী এবং অধিক সতর্ক । আপনি উপভোগ করেন এমন কোন কাজ গ্রহণ করুন । এটি হতে পারে বাগানের কোন কাজ, বৃক্ষ রোপন প্রভৃতি । প্রত্যেকদিন অন্তত ৩০মিনিট হাঁটুন, কেননা নিয়মিত হাটলে আপনার শারীরিক সক্রিয় মাত্রা (Physical Activity Level) অনেকগুন বৃদ্ধি পায় । এলিভেটর বা লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করুন । সারাক্ষণ টিভি সেট ও স্মার্টফোনের সামনে বুদ হয়ে বসে না থেকে সৃষ্টিশীল কাজে মনোনিবেশ করুন ।
৩. সঠিক সময়ে ও পর্যাপ্ত ঘুমান
একজন প্রাপ্ত বষয়স্কদের প্রতি রাতে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন । গবেষনায় উঠে এসেছে, পর্যাপ্ত নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, সমালোচনামূলক চিন্তা করার ক্ষমতা তথা সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে ।
প্রতিদিন রুটিন করে ঘুমাতে যেতে হবে । প্রতিরাতে একই সময় বিছানায় যান এবং সকালে একই সময়ে উঠে যান । এমনকি ছুটির দিন হলেও রুটিন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন । বিছানায় যাওয়ার পূর্বে অন্তত এক ঘন্টা আগে টিভি, ফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার প্রভৃতি এড়িয়ে চলুন ।
৪. চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন :
সর্বদা মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা মিনিমাম লেভেল রাখুন । কেননা আপনি যখনই কোন চাপ অনুভব করেন ঠিক তখনেই মস্তিষ্কে এক প্রকার হরমোন জমা হয় যা স্মৃতিশক্তিকে মারাত্মক ক্ষতি করে । দীর্ঘস্থায়ী দুশ্চিন্তা এবং উদ্বিগ্নতা ব্রেইনের মেমোরি প্রসেসে বাধা প্রদান করে স্মৃতিশক্তিকে লোপ করে দেয় । সুতরাং যখনই যখনই সময় পান একটু বিশ্রাম নিন এবং গভীর নিঃশ্বাসের সহিত রিলাক্স করুন । এরপর দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের দিকে অগ্রসর হোন (যেমন-জীবনকে সহজভাবে দেখুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, কাজের চাপ কমিয়ে আনুন প্রভৃতি) ।
৫. সম্পূর্ণ রূপে ত্যাগ করা সম্ভব না হলে পরিমিত এ্যালকোহল গ্রহণ করুন :
এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে সকল ব্যক্তি বছরের পর বছর অতিরিক্ত পরিমাণ এ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের শরীরে পুষ্টির মাত্রা কমে গিয়ে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দেয় । ব্রেন সেলের ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে এসকল ব্যক্তির মতিভ্রম এবং চিরস্থায়ী স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে । সুতরাং সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা সম্ভব না হলেও সামান্য কিংবা পরিমিত পরিমাণ এ্যালকোহল গ্রহণ করুন এবং ধীরে ধীরে এ অভ্যাস ত্যাগ করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করুন ।
৬. সর্বদা মাথাকে নিরাপদ রাখুন :
মাথা ব্যাথা Alzheimer’s রোগ বৃদ্ধিতে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে । এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে সকল ব্যক্তি দৌড়, সাঁতার প্রভৃতি খেলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করে তাদের মাথা ব্যাথা কম হয় এবং এদের স্মৃতিশক্তিও অত্যন্ত প্রখর । সুতরাং নিয়মিত এসব খেলাধুলা প্র্যাকটিস করুন এবং মাথাকে যেকোন ধরনের আঘাত থেকে রক্ষা করে চলুন ।
৭. ধূমপান থেকে বিরত থাকুন :
যেসকল শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্য স্মৃতিশক্তি লোপ পায় তার মধ্যে ধূমপান অন্যতম । ধূমপায়ীগণ অধূমপায়ীদের তুলনায় Alzheimer’s রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে থাকে । সুতরাং এখনই ধূমপান ত্যাগ করুন যাতে পরবর্তী জীবনে স্মৃতিশক্তি বর্তমানের মতোই অটুট থাকে ।
৮. নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন :
নিয়মিত খাদ্যপ্রাণ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন । এ লক্ষ্যে প্রতিদিন প্রচুর ফলমূল এবং শাকসবজি গ্রহণ করুন ।কারণ শাকসবজি ও ফলমূলে থাকে প্রচুর এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা স্মৃতিশক্তিকে করে তোলে অধিক কার্যকরী । এছাড়াও এটি ব্রেন এবং ব্রেন সেল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । যেসকল ফলমূল ও শাকসবজি এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এ পরিপূর্ণ সেগুলো হল-কমলালেবু, বেরী, ব্রকলি, বিভিন্ন সবুজ শাক, স্পিনাক, গাজর, মিষ্টি আলু, টমেটো প্রভৃতি । অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় বিভিন্ন পরিপূরক হোক তা বড়ি, ক্যাপসুল বা অন্য যেকোন পন্থা তা খেকে সরাসরি উপরোক্ত শাকসবজি গ্রহণ করলে ফল পাওয়া যায় অনেক বেশি ।
Image by mohamed Hassan from Pixabay |
৯. নিয়মিত আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন :
নিয়মিত মেডিকেল চেক-আপ আপনাকে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ সম্পর্কে পূর্বেই অবহিত করবে ফলে বিভিন্ন রোগের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রেখে আপনার স্মৃতিকে করবে অম্লান । নিয়মিত মেডিকেল চেক-আপ আপনার রক্তচাপ, কোলেস্টরল লেভেল এবং রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে । এছাড়াও এটি থাইরয়েড গ্রন্থির সাধারণ কার্যক্রম নিশ্চিত করে । আর এ সব পন্থা মস্তিষ্কের চাপ কমিয়ে স্মৃতিশক্তির লোপ পাওয়া থেকে ব্যক্তিকে রক্ষা করে অত্যন্ত সুচারুভাবে ।
0 মন্তব্যসমূহ