উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপার টেনশন নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস

 

diet-plan-tips-for-control-hypertension-in-bangla
Image by mohamed Hassan from Pixabay

হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ এতটাই বেশি হচ্ছে-অনেক প্রবীণ বা বয়স্ক মানুষের পাশাপাশি কম বয়স্ক মানুষের মধ্যেও এটিও দেখতে পাওয়া যায় ।সাধারণত বেশি ওজন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে অনেকেই খুব কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে আক্রান্ত হন ।উচ্চ রক্তচাপ হলে প্রথমেই করণীয় প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ । সেই সঙ্গে খাবারের নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি । কেননা উচ্চ রক্তচাপ মানেই এখান থেকে পরবর্তী সময়ে কিডনি এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রত্যেক রোগীর উচিত তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা । সহজ জীবনযাপন, অল্প কিছু খাবার পরিত্যাগ আর বেশ কিছু খাবার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যোগ করে নিলেই পাওয়া যেতে পারে এ রোগের সুন্দর নিয়ন্ত্রিত সমাধান । আমরা অনেকেই জানি না, খুব ছোট কিছু খাদ্যাভ্যাস এসব রোগের খারাপ প্রভাব থেকে অনেকটাই পরিত্রাণ দিতে পারে ।আজ এমন কিছু খাদ্যাভ্যাস নিয়েই আলোচনা করব-

এই রোগের সমাধানে তাজা ফল যেমন-লেবু, জাম্বুরা, আঙ্গুর, পেয়ারা, আমলকী, কামরাঙা, আপেল, কমলা, মালটা, পেস্তা বাদাম, ডালিম, কলা, নাশপতি, পেঁপে ও তরমুজ ইত্যাদি খেতে পারেন ।

এ ছাড়া সবুজ শাকসবজি যেমন-প্রায় সব ধরনের সবুজ শাক (পালংশাক, কলমিশাক, মুলাশাক, পাটশাক ইত্যাদি) এবং বাধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, শসা, মুলা, লাউ, মটরশুটি, ঢেঁরস, বেগুন, কুমড়ো ইত্যাদি । এছাড়া খেতে পারেন প্রোটিন জাতীয় প্রায় সব ধরনের খাবার (চর্বিযুক্ত মাংস, কলিজা, চিংড়ি ও ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে)

আবার মধু, তুলসী পাতার রস, পুদিনা পাতা, মেথি বীজ, রসুন, পেয়াঁজ ইত্যাদিতে রয়েছে বিশেষ ঔষধি গুণ যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করতে খুবই কার্যকর ।

যেসব খাবার উচ্চ রক্তচাপের রোগীর পরিত্যাগ করা উচিত

১. লবণ এবং বেশি লবণযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে । এর সঙ্গে বিট লবণ এবং অন্যান্য মুখরোচক লবণ গ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে ।

২. রান্নার সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে- কোনোভাবে সয়া সস যেন ব্যবহার না হয় ।

৩. অতিরিক্ত তেলযুক্ত খবার-কেক, পেস্ট্রি, নুডলস, পরোটা, লুচি, আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার যাবে না ।

৪. ডিমের কুসুম, খাসির মাংস, গরুর মাংস ইত্যাদি খাওয়া যাবে না ।

৫. চাটনি অর্থাৎ আচার খাওয়া যাবে না । কারণ আচারে প্রচুর তেল ও লবণ ব্যবহার করা হয়; যা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য খুবই ক্ষতিকর ।

সারাদিনের খাবারে পটাশিয়াম জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে পারলে উচ্চ রক্তচাপের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় । সাধারণত ডাবের পানি, কলা ও সবজি খেলে উচ্চ রক্তচাপ সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে ।

একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর অবশ্যই তেল, চর্বি এবং অতিরিক্ত লবণ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে । তবে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বাদাম, পেঁয়াজ, ডালিম, আপেল, শালগম, তিসি, ডার্ক চকোলেট, কালিজিরা, চালতা একেবারে টনিকের মতো কাজ করে ।

হাইপার লিপিডেমিয়া বা হাইকোলেস্টেরল

মূলত রক্তে কোলেস্টেরল, এলডিএল-এর মাত্রা বেড়ে গেলেই হাইপার লিপিডেমিয়া দেখা যায় । তাই যেসব খাবারে কোলেস্টেরল এবং এলডিএল-এর মাত্রা বেশি সেগুলো বেছে চলতে হবে । সাধারণত এ ধরণের রোগীর প্রতিদিনের খাবারে ডাল, বিচি, তিল, ভুট্টা, অলিভ অয়েল, মাছ, তাজা ফল, সবুজ শাকসবজি, স্যুপ, সালাদ, লেবু, ডিমের সাদা অংশ, মাছ, তেঁতুল, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন । রঙিন শাকসবজি একই সঙ্গে ভিটামিন, মিনারেল ও আঁশের উৎস । আঁশ শরীরের অতিরিক্ত লিপিড বা ফ্যাট বের করে নিয়ে যায় । এছাড়া কম তেলযুক্ত খাবার খাওয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ ।আরও কিছু খাবার বর্জন করতে হবে যেমন – বিস্কুট, ক্রিম, দুধের সর, ঘি, ডালডা, মাখন, মগজ, বেকারি জাতীয় খবার, ইত্যাদি তেল জাতীয় খবার ।

সুতরাং কিছু খাবার নিজের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিযে আর কিছু খাদ্যাভ্যাস যোগ করে আপনি ভালো থাকতে পারেন সহজেই । হাইপারটেনশন, হাইপারলিপিডেমিয়া এই দুটি রোগকেই সুষম খাদ্য গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ