বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিতে সংগঠিত গণআন্দোলন ভাষা আন্দোলন । ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্তির অব্যবহিত পরেই শুরু হওয়া ভাষা শহীদদের ত্যাগের এ আন্দোলন ১৯৫৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সংবিধানে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অনুমোদনের মাধ্যমে তার লক্ষ্য অর্জন করে ।আর ভাষার জন্য শ্রদ্ধা, ত্যাগ, আত্মদান ও গৌরবের মহিমায় সমুজ্জ্বল সংগ্রামের প্রতীক এবং স্মারক হিসেবে আমরা প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করি শহীদের স্মরণ করি । আজকের এই অনুচ্ছেদ শহীদ মিনারের ইতিহাস, তথ্য ও ইতিকথা নিয়ে সাজানো ।
প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ
১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ব্যারাক প্রাঙ্গণে ভাষা শহীদদের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন । এটাই ছিল ঢাকায় নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার । প্রথম শহীদ মিনারের নকশাকার ছিলেন বদরুল আলম । ‘স্মৃতি স্তম্ভ’ নামের মিনারটি ১৯৫২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয় । উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা মৌলভী মাহবুবুর রহমান । এদিন সন্ধ্যায় পুলিশ শহীদ মিনারটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে দেয় ।
Image from Wikipedia |
শহীদ মিনার ধ্বংসের প্রতিবাদে কবিতা
স্মৃতির মিনার ভেঙ্গেছে তোমার?
ভয় কি বন্ধু আমরা এখনো
চার কোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো ।
পুলিশের হাতে প্রথম শহীদ মিনার ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় কবি ‘আলাউদ্দিন আল আজাদ’ রচনা করেন ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ কবিতা ।
শহীদ মিনার পুন:নির্মাণ
পুলিশ কর্তৃক প্রথম স্মৃতিস্তম্ভটি ধ্বংস হওয়ার দুই বছর পর, একই স্থানে ১৯৫৪ সালে আবারও শহীদ মিনার পুন:নির্মাণ করা হয় । এর এর নকশা করেন স্থপতি ‘হামিদুর রহমান’ । এবং আবারও ১৯৫৭ ও ১৯৬৩ সালে মিনারটির নকশায় পরিবর্তন আনার কাজ শুরু হলেও সামরিক আইন প্রণয়নের কারণে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না করেই বন্ধ করা হয় ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আবার শহীদ মিনারকে ধ্বংস করে এবং সেখানে মসজিদ নির্মাণের জন্য 'মসজিদ' শব্দটি দিয়ে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করে ।
১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে শহীদ মিনার নতুন করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এই সময়ও নির্মাণটি ১৯৬৩ সালের সংকীর্ণ নকশা অনুযায়ী তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করা হয় । ১৯৭৬ সালে একটি নতুন নকশা অনুমোদন করা হয়, তবে এটি বাস্তবায়িত হয় নি।
পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে শহীদ মিনার তার বর্তমান রূপে নির্মিত হয়।
0 মন্তব্যসমূহ