রোগ নির্ণয় : বিভিন্ন মেডিকেল টেস্টের নাম

use-of-various-medical-tests-to-diagnose-the-disease
Image Source : pixabay

 একসময় অজ্ঞতার কারণে মানুষ রোগসংক্রান্ত অনেক কুসংস্কারে বিশ্বাস করতো । কিন্তু আধুনিক সমাজে মৃত্যুহার অনেক কমে গেছে, তার প্রধান কারণ হচ্ছে আধুনিক বিভিন্ন যন্ত্র উদ্ভাবিত হওয়ার ফলে রোগের কারণ নির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব হয়েছে । আমরা প্রায়ই চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু যন্ত্রপাতি যেমন-এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, ইসিজি, এন্ডোসকোপি, রেডিওথেরাপি, ইটিটি, এনজিওগ্রাফি ইত্যাদি নাম শুনেছি কিন্তু এগুলো কেন করা হয়, কখন করা হয় এবং কোন রোগ নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয় তা জানা নেই; চলুন চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো সম্পর্কে জেনে নিই । 


এক্সরে (Xray)

1-xray-medical-test
Image Source : pixabay

স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে ফাটল, ভেঙে যাওয়া হাড় ইত্যাদি এক্সরের সাহায্যে খুব সহজেই সনাক্ত করা যায় ।মুখমন্ডলের যে কোনো ধরনের রোগ নির্ণয়ে এক্সরের ব্যবহার অনেক যেমন-দাঁতের গোড়ায় ঘা এবং ক্ষয় নির্ণয়ে এক্সরে ব্যবহৃত হয় । পেটের এক্সরের সাহায্যে অন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা (Intestinal Obstruction)সনাক্ত করা হয় । এক্সরের সাহায্যে পিত্ত থলি ও কিডনির পাথরকে সনাক্ত করা যায় ।বুকের এক্সরের সাহায্যে ফুসফুসের রোগ যেমন-নিউমনিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি নির্ণয় করা যায় ।


আল্ট্রাসনোগ্রাফি (Ultrasonography)

Ultrasonography
Image Source : wikipedia

আল্টাসনোগ্রাফির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার স্ত্রীরোগ এবং প্রসূতিবিজ্ঞানে লক্ষ করা যায় । এর সাহায্যে ভ্রুনের আকার পূর্ণতা, ভ্রুণের স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক অবস্থান জানা যায় । প্রসূতিবিদ্যায় এটি একটি দ্রুত, নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য কৌশল । আল্ট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে  জরায়ুর টিউমার এবং পেলভিক মাসের (Pelvic Mass) উপস্থিতি শনাক্ত করা যায় ।
বিভিন্ন ধরনের ডাক্তারী পরীক্ষা যেমন-পিত্তপাথর, হৃদযন্ত্রের ত্রুটি এবং টিউমার শনাক্তকরণে  আল্ট্রাসনোগ্রাম ব্যবহার করা হয় । হৃদপিন্ড পরীক্ষা করার জন্য যখন আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করা হয় তখন এ পরীক্ষাকে ইকোকার্ডিওগ্রাফি বলে ।


সিটি স্ক্যান (Computed Tomography Scan)

 
Computed-Tomography-Scan)
Image Source : pixabay

সিটিস্ক্যানের সাহায্যে শরীরের নরম টিুস্যু, রক্তবাহী শিরা বা ধমনী, ফুসফুস, ব্রেণ ইত্যাদির ত্রিমাত্রিক ছবি পাওয়া যায় । যকৃত, ফুসফুস এবং অগ্নাশয়ের ক্যান্সার সনাক্ত করার কাজে সিটিস্ক্যান ব্যবহৃত হয় । সিটিস্ক্যানের প্রতিবিম্ব চিকিৎসকে টিউমার সনাক্তকরণ, টিউমারের আকার, অবস্থান এবং টিউমারটি পাশ্ববর্তী অন্য টিস্যুকে কী পরিমাণ আক্রান্ত করেছে তা নির্ধারণেও সাহায্য করে । মাথার সিটিস্ক্যানের সাহায্যে মস্তিষ্কের ভেতরে কোনো ধরনের রক্তপাত, ধমনীর ফুলা এবং টিউমারের উপস্থিতি সম্পর্কে জানা যায় । সিটিস্ক্যানের দ্বারে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা আছে কিনা তাও জানা যায় । সাধারণত গর্ভবতী মহিলাদের সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করা হয় না । সিটি স্ক্যান পরীক্ষয় ‘ডাই’ ব্যবহৃত হলে এলার্জিজনিত বিক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।


এমআরআই (Megnetic Resonance Imaging)

4-Megnetic-Resonance-Imaging
Image Source : wikimedia

এমআরআই এর মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রত্যেকটি প্রতিবিম্ব শরীরের অভ্যন্তরের সবকিছু দেখতে সাহায্য করে । পায়ের গোড়ালির মচকানো এবং পিঠের ব্যাথায় এমআরআই ব্যবহার করে জখমের বা আঘাতের তীব্রতা নিরুপণ করা হয় । ব্রেণ এবং মেরু রজ্জুর (Spinal Cord)বিস্তৃত প্রতিবিম্ব তৈরির জন্য এমআরআই হলো অত্যন্ত মূল্যবান পরীক্ষা ।


ইসিজি (ECG)

5-Ecg-Medical-Equipment
Image Source : maxpixel.net

সাধারণত কোনো রোগের বাহ্যিক লক্ষণ যেমন-বুকের ধড়পড়ানি, অনিয়মিত ও দ্রুত হৃৎস্পন্দন, বুকে ব্যাথা ইত্যাদির কারণ নির্ণয় করার জন্য ইসিজি পরীক্ষা করতে হয় । এছাড়াও নিয়মিত পরীক্ষার অংশ হিসেবে যেমন-অপারেশনের পূর্বে ইসিজির সাহায্যে নেওয়া হয় । হৃৎপিন্ডের যে সকল অস্বাভাবিক প্রকৃতি ইসিজির মাধ্যমে সনাক্ত করা যায় এগুলো হলো-
১.হৃৎপিন্ডের অস্বাভাবিক স্পন্দন যেমন-হৃৎপিন্ডের স্পন্দনের হার বেশি বা কম বা অনিয়মিত হলে ।
২.হার্ট অ্যাটাক যা সম্প্রতি বা কিছুদিন পূর্বে সংঘটিত হয়েছে;
৩.সম্প্রসারিত হৃৎপিন্ড অর্থাৎ হৃৎপিন্ডের আকার বড় হয়ে যাওয়া ।


এন্ডোসকোপি (Endoscopy)

6-Endoscopy_start
Image Source : wikimedia

এন্ডোসকোপির মাধ্যমে চিকিৎসকগণ শরীরের অভ্যন্তরে যে কোনো ধরণের অস্বস্থিবোধ, ক্ষত, প্রদাহ এবং অস্বাভাবিক কোষবৃদ্ধি পরীক্ষা করে থাকেন । নিম্নবর্ণিত বিভিন্ন অঙ্গ পরীক্ষা করার জন্য এন্ডোসকোপি ব্যবহৃত হয় এগুলো হলো-(ক)ফুসফুস, বুকের কেন্দ্রীয় বিভাজন অংশ; (খ)পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র বা কোলন; (গ) স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ; (ঘ)উদর এবং পেলভিস; (ঙ)মুত্রথলির অভ্যন্তরভাগ; (চ)নাসাগহ্বর এবং নাকের চারপাশের সাইনাসসমূহ; (ছ)কান ।


রেডিওথেরাপি (Radiotherapy)

Radiotherapy Treatment
Image by IAEA Imagebank from Flickr
 

রেডিওথেরাপি শব্দটি ইংরেজি ‘Radiation Therapy’ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ । এটি ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগ যেমন-ক্যান্সার, থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক প্রকৃতি, রক্তের কিছু ব্যাধির চিকিৎসা করা হয় । সাধারণত রেডিওথেরাপি উচ্চশক্তিসম্পন্ন এক্সরে ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে । এটি টিউমার কোষের অভ্যন্তরস্থ ডিএনএ (DNA)-কে ধ্বংসের মাধ্যমে কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি করার ক্ষমতা বিনষ্ট করে ফেলে । 


ইটিটি (Exercise Tolerance Test)

8-Exercise-Tolerance-Test
Image Source : wikipedia

 

উদ্দীপিত হৃৎযন্ত্রের একটি পরীক্ষা হলো ইটিটি । ব্যায়াম বা অনুশীলন চলাকালীন হৃৎপিন্ডের বৈদ্যুতিক সক্রিয়তা বা কার্যকলাপ (স্পন্দনের হার, ছন্দময়তা) ইটিটি পরীক্ষার মাধ্যমে রেকর্ড করা হয় ।এটি আসলে অনুশীলনরত অবস্থায় রোগীর ইসিজি পরীক্ষা । করোনারী আর্টারী রোগের রোগ নিরুপণের জন্য এ পরীক্ষাটি খুবই উপকারী । পরীক্ষার  সময় রোগীকে একটি স্থির বাইসাইকেল চালাতে বলা হয় অথবা একটি ট্রেডমিল যন্ত্রে অনবরত হাঁটার নির্দেশনা দেওয়া হয় । অনুশীলন চলা অবস্থায় চিকিৎসক রোগীর ইসিজি রেকর্ড করেন ।


এনজিওগ্রাফি (Angiography)

Angiography
Image Source : wikimedia

রক্তনালিতে ব্লক এবং রক্তনালি সরু এবং অপ্রস্থ হলে শরীরে রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হয় । এনজিওগ্রাফি পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তবাহী শিরা বা ধমনীগুলো সরু, বল্ক ও প্রসারিত হয়েছে কী না তা নির্ণয় করা যায় । 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ