কমলা খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও খোসার নানাবিধ ব্যবহার

জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য একটি ফল কমলা। এটি সারা বছরই পাওয়া যায় এবং দামেও সস্তা। তাই এটি আর এখন বিদেশি কোনো ফল নয়। জনপ্রিয় এই ফলটির পুষ্টিগুণ কী, আমরা সবাই হয়তো জানি না।

benefits-of-eating-oranges-nutritional-value-and-various-uses-of-the-peel
Image by S. Hermann / F. Richter from Pixabay

কমলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ হলো :

১) ১০০ গ্রাম কমলাতে আছে ভিটামিন বি ০.৮ মিলিগ্রাম, সি ৪৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩০০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম।

২) দৈনিক যতটুকু ভিটামিন 'সি' প্রয়োজন তার প্রায় সবটাই একটি কমলা থেকে সরবরাহ হতে পারে।

৩) কমলায় আছে শক্তি সরবরাহকারী চর্বিমুক্ত ৮০ ক্যালরি, যা শক্তির ধাপগুলোর জন্য জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।

৪) কমলায় আছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা ক্যান্সার প্রতিরোধক, স্বাস্থ্যকর, রক্ত তৈরিকারক এবং ক্ষত আরোগ্যকারী হিসেবে খুবই উপযোগী।

৫) কমলা বি ভিটামিন ফোলেটের খুব ভালো উৎস, যা জন্মগত ত্রুটি এবং হৃদরোগের জন্য ভালো কাজ করে।

৬) প্রতিদিনকার প্রয়োজনীয় পটাসিয়ামের ৭ ভাগ পূরণ করা সম্ভব কমলা দিয়ে, যা শরীরের তরলের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজন।

৭) কমলাতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেল ড্যামেজ করে। ফলে ত্বকে সজীবতা বজায় থাকে।

৮) এতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিভিন্ন ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।


৯) কমলাতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন সেল ড্যামেজ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

১০) এর ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম থাকায় ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে ।

১১) পটাসিয়াম ইকেট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে এবং কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ভালো রাখতে সহায়তা করে ।

১২) কমলাতে উপস্থিত লিমিনয়েড মুখ, ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলীকে কোমল রাখে এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

১৩) ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ওজন কমাতেও সহায়তা করে।

 

প্রতিদিন একটি করে কমলা খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে রাখবে সুস্থ-সবল ও প্রাণবন্ত। প্রতিদিন এক গ্লাস করে কমলার জ্যুস বা একটি কমলা খাওয়ার অভ্যাস করা বেশ কঠিন কাজ নয়। তবে জ্যুসের চেয়ে ফলটিই খাওয়া ভাল। কারণ, কমলায় রয়েছে আঁশ, যা আমাদের বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। 

কমলা কেন খাবেন, তার ৪টি কারণ এখানে উপস্থাপন করা হলো:

 

benefits-of-eating-oranges-nutritional-value-and-various-uses-of-the-peel
Image by Steve Buissinne from Pixabay

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে :

কমলা আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন সি'র চাহিদা পূরণ করে। একই সঙ্গে এ ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট জাতীয় উপাদান। এ পুষ্টি উপাদানসমূহ রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ছোটবড় নানা ব্যাধি ও সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
 

সুন্দর ত্বকের জন্য :

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ত্বকও দ্রুত বুড়িয়ে যেতে শুরু করে। ভিটামিন সি ছাড়াও কমলায় থাকা অ্যান্টি- অক্সিডেন্টসমূহ ত্বককে সতেজ ও সজীব রাখতে সাহায্য করে। বার্ধক্যেও ত্বককে অনেকটাই মসৃণ রাখে, সহজে বলিরেখা পড়ে না। কারণ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিস সি ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখে বহু বছর। ফলে, বয়স বাড়লেও, আপনাকে দেখাবে চিরতরুণের ন্যায়।
 

চোখের জন্য :

প্রতিদিন একটি করে কমলা খাওয়ার অভ্যাস আপনার দৃষ্টিশক্তিকে ভাল রাখে। কারণ, কমলায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি ও পটাসিয়াম। এ ভিটামিনগুলো আপনার দৃষ্টিশক্তির জন্য বেশ উপকারী।
 

পাকস্থলীর আলসার থেকে সুরক্ষায় :

আঁশের অন্যতম উৎস কমলা পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত কমলা খাওয়ার অভ্যাস পাকস্থলীর আলসার ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সুরক্ষা দেবে। পাকস্থলীকে রাখবে সবল।

কমলালেবুর খোসার নানাবিধ ব্যবহারঃ 

অ্যাজমা ও কাশির সমস্যায় : কমলার খোসার গুঁড়ো কাশির সমস্যা দূর করে। এছাড়াও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও অ্যাজমা উপশমে এটি কাজে লাগে। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কমলার খোসায় তৈরি চা নিয়মিত পান করুন। ওঁ কফ ও পিত্তের সমস্যায়: কফ ও পিত্ত সমস্যার সমাধানে কমলার খোসা উপকারী। কমলার খোসা পাতলা করে ছিলে গ্রেটারে ঘষে নিন। খোসার কুচিগুলো রঙ চা তৈরির সময়েই ঢেলে দিন। এর সাথে অল্প পরিমাণে আদা দিতে পারেন।

এবার পানি ফুটিয়ে আদা ও কমলার গন্ধ ছড়ালেই চায়ের মতো পান করুন। চাইলে মধুও মেশাতে পারেন। র্ভ অ্যাসিডিটি দূর করতে: কমলার খোসার তেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি রয়েছে যা পেটের অ্যাসিডিটি দূরীকরণে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে ডি-লিমোনেন নামের একটি উপাদান আছে যা অন্ত্র ও লিভার ফাংশনকে স্বাভাবিক রাখে। আর এর তেল পানিতে দু'ফোঁটা মিশিয়ে পান করলে অ্যাসিডির সমস্যা একেবারেই চলে যাবে।
 

ওজন কমাতে: উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলের সমস্যা ও ওজন কমানোর জন্য কমলার খোসা অনেক বেশি কার্যকরী। কারণ এতে ট্রাইগ্লিসারাইড দ্রবীভূত থাকে যেটি সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করে।
 

ত্বকের কালো দাগ দূর করার উপায়:
১ টেবিল চামচ টক দই, ১/২ চামচ মধু, ১ চা চামচ কমলার খোসা বাটা এক সঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ত্বকে লাগান। ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে প্যাকটিতে এক চা চামচ অলিভ ওয়েল বা নারিকেল তেল মিশিয়ে নিতে পারেন।
 

ব্ল্যাকহেডস দূর করতে: ২ চা চামচ দই এবং ২ চা চামচ কমলার খোসার গুঁড়া একটি ডিমের সাদা অংশের সাথে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। যেসব স্থানে ব্ল্যাকহেডস হয়েছে সেখানে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর হালকা ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ব্যবহার করলে ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে সমস্যা কমে যাবে।
 

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি : কমলার খোসা বাটা ১ টেবিল চামচ, ১/২ টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া, ১/২ টেবিল চামচ মধু এবং ১/২ চা চামচ জয়ফলের গুঁড়া নিয়ে পেস্ট বানানি মুখে লাগান। ২০মিনিট রেখে হালকা ম্যাসাজ করে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। পরে ময়শ্চারাইজার লাগান। জানালা এবং ফ্লোর পরিষ্কারক হিসেবে: একটি গ্লাসের জারে কমলার খোসা রেখে তাতে ভিনেগার ঢালুন। এটিকে ঢেকে কয়েক সপ্তাহ ফ্রিজে রেখে দিন। মাঝে মাঝে এটি নেড়ে দিন। পর বের করে ছেঁকে নিয়ে একচি স্প্রে বোতলে ঢালুন। জানালা ও ফ্লোর পরিষ্কারক হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারেন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ