মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হলেন দ্বি - জাতি তত্ত্বের ( Two Nations Theory ) এর উদ্ভাবক । ভারতবর্ষে হিন্দুবাদীদের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার দৃর্ভিসন্ধি এবং মূলসমানদের একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে স্বীকৃতিদানে অনীহার প্রেক্ষিতে মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এই দ্বি - জাতি তত্ত্বের ঘোষণা দেন ।
Image source : RoarMedia |
১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে বাংলা, পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে মুসলিম লীগ বিজয়ী হয় এবং কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটে । অন্যদিকে মাদ্রাজ , মধ্য প্রদেশ , যুক্ত প্রদেশ , বিহার ও উড়িষ্যায় কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে । কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সমঝোতা হয়েছিল যে , সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে মন্ত্রী নিয়োগ করতে হবে । কংগ্রেস যেসব প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সেখানে মুসলমানদের মধ্য থেকে বার মন্ত্রী নিয়োগে অসম্মত হয় । কোথাও দু একজন মন্ত্রী নিতে আগ্রহী হলেও তাদের কংগ্রেসে যোগদানের শর্তারোপ করে । এতে মুসলমানদের মধ্যে দারুণ ক্ষোভের সঞ্চার হয় ।
এ সময়ে কংগ্রেস নেতা নেহেরু দ্বার্থহীন ভাষায় বলতে থাকেন , ভারতে শুধুমাত্র দুটি দল আছে একটি কংগ্রেস অপরটি ব্রিটিশ সরকার । এর প্রতিবাদে জিল্লাহ জোরের সাথে বলেন , ভারতে তিনটি দল আছে — একটি মুসলিম লীগ , অপরটি কংগ্রেস এবং অন্যটি ব্রিটিশ সরকার ।
এসব ঘটনাররম্পরায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪০ সালের জানুয়ারি মাসে কংগ্রেস ও হিন্দুবাদীদের বক্তব্যের জবাবে ঘোষণা করেন , ' যে কোনো সংজ্ঞায় মুসলমানরা একটি স্বতন্ত্র জাতি , তাই তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার থাকতে হবে । এটাই জিন্নাহর দ্বি - জাতি তত্ত্ব ' নামে খ্যাত । তিনি বলেন , ইসলাম ও হিন্দুবাদের কথা এক নয় । দুটি শুধু ভিন্ন ধর্মই নয় প্রকৃতপক্ষে দুটি ভিন্ন ও সুনির্দিষ্ট সামাজিক ব্যবস্থাও বটে । মুসলমান ও হিন্দু কখনো এক জাতি নয় বরং পৃথক দুটি ধর্মীয় দর্শন , সামাজিক আচার - আচরণ এবং সংস্কৃতির অধিকারী । তাদের সভ্যতা আলাদা । এক ধর্মের কাছে যিনি বীর বলে খ্যাত অন্য ধর্মের কাছে তিনি গ্রহণীয় নয় । তিনি দাবি করেন ভারতবর্ষের হিন্দু ও মুসলমান দুটি আলাদা জাতি । মুসলমানরা একটি পৃথক জাতি , তাই তাদের প্রয়োজন একটি পৃথক আবাস ভূমি বা রাষ্ট্র ।
১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে একটি পত্রিকায় তিনি লেখেন , ভারতে দুটি জাতি রয়েছে এবং মাতৃভূমির শাসন ব্যবস্থায় উভয় জাতির অবশ্যই অংশগ্রহণ করতে হবে । শেরে বাংলার লাহোর প্রস্তাবের মূল ভিত্তি ছিল এই দ্বি - জাতি তত্ত্ব এবং এই তই সাধারণ পাকিস্তানের জন্ম দেয় । মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন , মুসলমানদের কৃষ্ট স্বতন্ত্র , আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বতন্ত্র , তাদের ইতিহাস ও অনুপ্রেরণার ক্ষেত্র স্বতন্ত্র, এমনকি নাম ধাম ও পরিচয়ও আলাদা । হিন্দু - মুসলমানরা একত্রে আহার করে না । সুতরাং জাতীয়তার যে কোনো সূত্র অনুযায়ী মুসলমানগণ একটি পৃথক জাতি । আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ীও মুসলমানরা একটি পৃথক জাতি । অতএব ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধান করতে হলে দ্বি - জাতি তত্ত্বে ভিত্তিতে করতে হবে । হিন্দুদের জন্য আবাসাভূমি থাকলে মুসলমানদের জন্যও পৃথক আবাসভূমি থাকতে হবে ।
Public domain, via Wikimedia Commons |
এই দ্বি - জাতি তত্ত্বের মধ্যেই ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রেরণা নিহিত ছিল । যার ভিত্তিতে মুসলমানরা পাকিস্তান দাবিতে মুখ্য হয়ে ওঠে এবং অবশেষে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয় । এমনকি বাংলাদেশের বীজও নিহিত ছিল এই তত্ত্বের মধ্যে ।
১৯৪৭ সালের পূর্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এক সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে প্রশ্ন করেছিলেন; গ্রামে, পাড়ায় কিংবা মহল্লায় হিন্দু ও মুসলিম উভয়েই মিলেমিশে থাকে। এদের মধ্যে ব্যাপক পরিমাণে সম্প্রীতিও পরিলক্ষিত হয়। তারপরও তাদেরকে আপনি হিন্দু-মুসলিম দুই জাতি হিসেবে আলাদা করছেন কেন? প্রশ্নটির উত্তরে জিন্নাহ বলেছিলেন, যেখানে এবং যেভাবেই তারা থাকুক না কেন, তারা বাস করে দুটি আলাদা জাতি হিসেবে। তারা একসাথে থাকলেও তারা এক নয়। তারা ভিন্ন, তারা স্বতন্ত্র। আলাদা জাতি হিসেবে পাশাপাশি বাস করার বিষয়টা এখনো রয়ে গেছে তবে তা হিন্দু-মুসলিম হিসেবে আলাদা নয়।
রেফারেন্স সমূহ:
https://bn.wikipedia.org/wiki/দ্বিজাতি_তত্ত্ব
https://en.banglapedia.org/index.php/Two-Nation_Theory
0 মন্তব্যসমূহ