নোবেল পুরস্কার কি? এর ইতিহাস – নোবেল প্রাইজ কেন দেওয়া হয়?

নোবেল পুরস্কার বা প্রাইজ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও গৌরবজনক পুরস্কার । এ প্রেক্ষাপটে আসুন জেনে নিই নোবেল সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী ।

নোবেলের ইতিবৃত্তি

what-is nobel-prize-history-and-rules-in-bangla
Image source : wikimedia  
 

পৃথিবীতে মানব কল্যাণ ও মহৎকর্ম কিংবা অনন্য সৃজনশীলতার জন্য কিছু মানুষ চিরস্মরণীয় হন । এমনই এক নাম-‘স্যার আলফ্রেড বার্নার্ড নোবেল’ । তিনিই নিজের নামে এ পুরস্কারটি প্রবর্তন করেন । ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ অক্টোবর জন্মগ্রহণকারী স্যার আলফ্রেড বার্নার্ড নোবেল ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে অবিষ্কার করেন ‘ডিনামাইট’ । নিজের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ডিনামাইটের ধ্বংসাত্মক ব্যবহার দেখে শেষ জীবনে খুবই অনুতপ্ত হযে পড়েছিলেন । এ কারণেই ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ নভেম্বর প্যারিস শহরে বসে নিজের সম্পত্তির ৯৪ শতাংশ অর্থ দান সম্বলিত একটি উইল লিপিবদ্ধ করেন । সেই উইল অনুসারেই প্রতি বছর পদার্থবিদ্যা, রসায়ন শাস্ত্র, চিকিৎসাবিদ্যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য ও বিশ্বশান্তির জন্য পৃথক শাখায় আন্তর্জাতিক এ পুরস্কার দেওয়া হয় ।

নোবেল ফাউন্ডেশন

২৯জুন ১৯০০ সালে নোবেল ফাউন্ডেশন গঠিত হয় । এ সংস্থার ওপর নোবেল পুরস্কার দেওয়ার দ্বায়িত্ব অর্পিত হয় । এই ফাউন্ডেশন স্বাধীন ও বেসরকারিভাবে পুরস্কার প্রদান, অনুষ্ঠান এবং অর্থ সংরক্ষণের বিষয়াবলি দেখাশুনা করে । তবে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে এ কমিটি হস্তক্ষেপ করে না ।

যে ক্যাটাগরিগুলোতে পুরস্কার প্রদান করা হয় : ১. পদার্থবিদ্যা, ২. রসায়ন বিদ্যা, ৩. চিকিৎসা বিজ্ঞান, ৪. সাহিত্য, ৫. শান্তি ও ৬. অর্থনীতি ।

নোবেল পুরস্কারের নিয়মাবলি

১. প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রার্থী নির্বাচনের সুপারিশমালা ও মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয় । নোবেল কমিটি সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে সুপারিশমালা চুড়ান্ত করে । ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা হয় ১০ ডিসেম্বর পুরস্কার প্রদান করা হয় ।

২. একমাত্র শান্তির ক্ষেত্রে পুরস্কার দেয়ার জন্য ব্যক্তির পাশাপাশি কোনো প্রতিষ্ঠানকেও নির্বাচিত করা হয় ।

৩. কোনো নির্বাচিত ব্যক্তি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলে পুরস্কারের অর্থ তহবিলে জমা থেকে যায় ।

৪. কোনো মৃত ব্যক্তিকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা যাবে না । তবে এক্ষেত্রে দু’বার ব্যতিক্রম হয়েছে ।

৫. একটি বিষয়ে সর্বোচ্চ ৩জন পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হতে পারবে ।

৬. শান্তিতে পুরস্কার নরওয়ের রাজধানী অসলোতে এবং অন্যান্য পুরস্কার সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হয় ।

বিজয়ীরা যা পান

প্রত্যেক নোবেল বিজয়ীকে একটি সোনার মেডেল, একটি ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট এবং নগদ অর্থ দেওয়া হয় । এ অর্থের পরিমান হচ্ছে- ১.৪মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১০মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার।

নোবেল দেওয়া হয়নি

১৯০১ সাল থেকে চালু হওয়া নোবেল পুরস্কার প্রতিবছর প্রদানের কথা থাকলেও ১৯৪০, ১৯৪১ এবং ১৯৪২ এই তিন বছর কাউকে নোবেল দেওয়া হয়নি ।

উপমহাদেশের নোবেল জয়ী

ভারতীয় উপমহাদেশে যারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তারা হলেন,

সাহিত্য- রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯১৩ খ্রি:)

পদার্থবিদ্যায়-স্যার চন্দ্রশেখর ভেস্কট রমন (১৯২০ খ্রি:)

অর্থনীতিতে- অমর্ত্য সেন (১৯৯৮খ্রি:)

শান্তিতে- মাদর তেরেসা (১৯৭৯খ্রি:), ড.মুহাম্মদ ইউনুস (২০০৬খ্রি:), কৈলাশ সত্যয়ার্থী (২০১৪খ্রি:), মালালা ইউসুফজাই (২০১৪খ্রি:) ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ