আমাদের কাছে ‘পেঁপে’ একটি সুস্বাদু ফল ও সবজি হিসেবে অতি পরিচিত ।বিখ্যাত ইতালীয় ভ্রমনকার ‘ক্রিস্টোফার কলম্বাস’ পেঁপেকে ফলের ফেরেশ্তা উল্লেখ করেছিলেন । সারা বছর জুড়ে বাংলার গ্রাম-গঞ্জে সব জায়গার ফলটি পাওয়া যায় ।চলুন পেঁপের বিভিন্ন পুষ্টিগুন, উপকারিতা, অপকারিতা ও ভুল ধারনা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক ।
পেঁপের উপকারিতা
১. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে পেঁপে
শরীরে অধিক কোলেস্টেরল বিল্ড-আপ করলে হার্ট অ্যাটাক ও হাইপারটেনশন এর ঝুঁকি বেড়ে যায় ।কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পেঁপে খেতে পারেন । ফাইবার বা আঁশ, ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফলটি শরীরের শিরা-উপশিরা হতে উচ্চ কোলেস্টেরল কামাতে সাহায্য করে ।
২. ওজন কমাতে পেঁপে
যারা ওজন কমাতে চান তারা অবশ্যই তাদের ডায়েট প্লানে পেঁপে রাখতে পারেন ।কম-ক্যালোরি ও প্রাকৃতিক ফাইবার সম্পন্ন ফল হিসেবে পেঁপে খুবই স্বাস্থ্যসম্মত । প্রতিদিন পেঁপে গ্রহণে দ্রুত খারাপ চর্বি বার্ন করে ওজন কমাতে কার্যকারী ।
৩. ত্বকের যত্নে পেঁপে
পেঁপে খাওয়া ত্বকের জন্য খুবই উপকারী । পেঁপেতে রয়েছে ভিটামিন এ, ই, সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে ।তাছাড়া সামান্য পেঁপের সাথে দুধ ও মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, ত্বকের অবাঞ্চিত দাগ দূর হয় এবং তৈলাক্ত ত্বক থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় ।
৪. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে পেঁপে
পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং চোখের নানা সমস্যা দূর করে । চোখের লেন্স ও রেটিনা জারন প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে পেঁপের ভিটামিন এটিকে প্রতিরোধ করে ।চোখে ছানি ও বার্ধক্য প্রতিরোধ করে ।
৫. ডায়াবেটিসের জন্য পেঁপে
রক্তে অনিয়মিত শর্করার মাত্রা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক হতে পারে ।তবে পেঁপের মিস্টতায় রয়েছে লো-সুগার কন্টেন্ট যা ডায়াবেটিস রোগীরা নির্দিধায় খেতে পারেন ।
৬. হজম শক্তি বৃদ্ধিতে পেঁপে
কাঁচা পেঁপেতে পেপাইন ও ক্যাম পেপাইন নামক এনজাইম থাকে যা খাদ্য হজম করতে সহায়তা করে। তাই যাদের হজমে সমস্যা বা কম হজম হয় তারা কচি পেঁপে সালাদ বা সবজি হিসেবে খান সমস্যা কমে যাবে ।
৭. বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে পেঁপে
-মানবদেহের ক্যান্সার তৈরির একটি উপাদান হলো ‘নাইট্রোস্যামাইন’ । ভিটামিন-সি এটিকে প্রতিরোধ করে ।ঘন ঘন সর্দি, কাশি, অ্যাজমা ও মানসিক সমস্যা কমিয়ে দেয় ।
-ভিটামিন-বি বেরিবেরি রোগ, ঠোঁটের ও মুখের ঘা প্রতিরোধ করে ।
-পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ।
-পেঁপে ভিটামিন, পেকটিন এবং ক্যারোটিনয়েডের ভালো উৎস ।
-স্যালুবল ফাইবার নামে একটি উপাদান থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ।তাছাড়া পেঁপেতে
-বিটা ক্যারোটিন ফ্লেভানয়েড, লুটেইন উপাদান থাকে । এগুলো ফুসফুসের মারাত্মক রোগ, ক্যান্সার, হুদরোগ এবং ডিমেনশিয়া (স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া) ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
-কাঁচা বা পাকা পেঁপের যে সাদা রস বের হয় তা খেলে চামড়ার চুলকানি, চর্মরোগ, অনিদ্রা, মাথাব্যাখ্যা কমে যায় । তার সঙ্গে হৃদরোগে খুবই উপকার হয় ।
পেঁপের অপকারিতা
গর্ভবতী অবস্থায়
গর্ভবতী অবস্থায় কাঁচা পেঁপে খাওয়া যাবে না ।কারণ কাঁচা পেঁপে পেপাইন রয়েছে যা প্রজেসেরোনের মুক্তিতে বাধা দেয়। এটি গর্ভবস্থায় সংকোচনের কারণ হতে পারে ।
বেশি পেঁপে খাওয়া
সাধারণ পরিমাণে পেঁপে খাওয়ার বিষয়টি সুরক্ষিত । তবে বেশি পেঁপে খাওয়ার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে ।
পেঁপে খাওয়া নিয়ে কিছু ভুল ধারণা :
আমরা কি পেঁপে বীজ খেতে পারি?
-হ্যাঁ, অবশ্যই । পেঁপের বীজে প্রচুর স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে ।এটি লিভার সিরাসোসিস নিরাময় করতে সাহায্য করে ।এটি আয়ুরবের্দিক ঔষধি হিসেবে খাদ্যে বিষাক্ততা নিরাময় ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয় ।
পেঁপে কি রাতে খাওয়া উচিত?
-হ্যাঁ, পাঁকা পেঁপে রাতেও খাওয়া যাবে ।রাতে পেঁপে খাওয়া যেতে পারে কারণ এতে রয়েছে কম শর্করা ও কম চর্বি যা পেশী স্তরের উপর জমতে পারে না ।
দুধ খাওয়ার পর কি পেঁপে খাওয়া যাবে?
-হ্যাঁ, খাওয়া যাবে । তাছাড়া পাঁকা পেঁপে ও দুধের মিশ্রনে মিল্কশেক বানিয়েও খাওয়া যাবে ।এটি স্বাস্থের জন্য ভালো ।
0 মন্তব্যসমূহ