পাখনা
ও সাধারণত দেহের উপরিভাগে আঁশযুক্ত, ফুলকাবিশিষ্ট জলচর প্রাণীর নাম মাছ । এটি মেরুদন্ডী
প্রাণী । পৃথিবীতে প্রায় পাঁচশ গোত্রের ২৮ হাজার প্রজাতির মাছ রয়েছে । মাছ বিশ্ববাসীর
দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিয়ের প্রয়োজন মেটায় । পৃথিবীতে এমন অনেক অদ্ভুত মাছ আছে
যাদের রয়েছে অদ্ভুত, বিচিত্র ও রহস্যময় জীবন বৈশিষ্ট্য যা জানলে আপনি নিশ্চই অবাক হবেন
। চলুন এরকম ১২ প্রজাতির অদ্ভুত মাছ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক ।
Image by yukiqwa from Pixabay |
সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মাছ হচ্ছে ‘গোবি মাছ’ । এর গড় দৈর্ঘ্য মাত্র ৭.৬ মিলিমিটার লম্বা হয়ে থাকে । গোবি মাছ বিশ্বজুড়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও নাতিশীতোষ্ণ জলে, প্রবালীয় পাথর ও পাথুরে অঞ্চলে পাওয়া যায় । এরা একুরিয়ামের শোভা বৃদ্ধি করে ।
২. যে মাছ উড়তে পারে
Image by Tom Benson from Flickr |
হ্যাঁ উডুক্কু (Flying Fish) নামের এক ধরনের সামুদ্রিক মাছ যা উড়তে পারে । উডুক্কু মাছ যদিও পাখির মতো একইভাবে উড়ে যেতে পারে না । তবুও তাদের দীর্ঘ ডানা জাতীয় পাখনা দ্বারা জলের পৃষ্ঠের উপরে লাফিয়ে প্রায় এক হাজার গজ পর্যন্ত উড়তে পারে । উড়ন্ত এই মাছ বিশেষত ক্যারিবীয় সাগরে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ।তাছাড়া এদের ৪০টি বিভিন্ন প্রজাতি আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলে দেখতে পাওয়া যায় । এগুলো সাধারণত বিষাক্ত হয় তাই খাওয়ার উপযোগী নয় ।
৩. যে মাছ বিদ্যুৎ তৈরি করে
Image by MALIZ ONG from Public Domain Pictures |
‘ইলেকট্রিক
ইল’ মাছটির নাম শুনেই বুঝা যায় এর সাথে বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে । হ্যাঁ এটি বিদ্যুৎ
উৎপন্ন করতে পারে । তবে একটি ইলেকট্রিক ইল মাছ কী পরিমান বিদ্যুৎ উপন্ন করতে পারে জানেন,
৬০০ ভোল্ট পরিমাণ । ইলেকট্রিক ইল মাছের দ্বারা মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে তবে অত্যন্ত
বিরল । এরা দক্ষিণ আমেরিকার সমুদ্রাঞ্চলে অধিক দেখা যায় ।
৪. সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন মাছ
Image by jiadanchaomian from Flickr |
বিশ্বের
সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন মাছ হচ্ছে ‘সেলফিশ (Sailfish)’ । এরা গভীর সমুদ্রে ৭০ মাইল
প্রতি ঘন্টায় বা ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার গতিতে ছুটে চলতে পারে ।এদের ওজন ১০০ কেজি
পর্যন্ত এবং দৈর্ঘ্য ৩মিটার পর্যন্ত হতে পারে ।
৫. বক্স আকৃতির মাছ
Image by Fraancois Libert form Flickr |
‘বক্স
ফিশ’ হচ্ছে বিরল প্রজাতির মাছ যা বাক্সের মতো আকারযুক্ত । ইন্দোনেশিয়ার সুলাওসি দ্বীপে
এর দেখা মেলে । মাছগুলি কম বয়সে উজ্জ্বল হয় তবে বয়স বাঁড়ার সাথে সাথে এরা নীল-ধূসর
বর্ণের হয় ।
৬. বেলুনাকৃতির মাছ
Image by Saspotato from Flickr |
‘পটকা
মাছ’ দেখতে গোল বেলুন আকৃতির… হ্যাঁ তাই বলে একে নিয়ে খেলতে যাবেন না কিন্তু
! এরা বেশ বিপজ্জনক মাছ । এদের শরীরের উপরিভাগে
থাকা কাঁটায় বিষ বহন করে । এরা যখন কোনো প্রাণ দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন নিজেদের কাঁটা
দিয়ে বিষ ছড়িয়ে দেয় ।
৭. পাথর মাছ
Image from wikimedia |
‘স্টোন
ফিস’ নামের এই মাছটি সমুদ্রের তলদেশে এমনভাবে পাথরের ছদ্মবেশে থাকে যেন মনে হয় আসল
পাথর । তবে একে পাথর মনে করে সংস্পর্শে গেলে সবচেয়ে বড় ভুল করবেন । কারণ এরা হচ্ছে
পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর প্রাণী যার শরীরের কাঁটায় রয়েছে প্রাণঘাতী বিষাক্ত পদার্থ ।
৮. অদ্ভুত বংশবৃদ্ধি
Image by Kevin Bryant from Flickr |
‘জোফিশ
(Jawfish)’ যেভাবে বংশবৃদ্ধি করে থাকে অদ্ভুত বটে । মহিলা জোফিশ ডিম দেয় তবে পুরুষ
মাছগুলি ডিমগুলোকে পরাগিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ১-২ সপ্তাহের মুখের মধ্যেই রাখে ।এরা শিকারী
থেকে নবজাতককে বাঁচাতে এই মাছটি তার মুখের ভিতরে ডিম ফোটায় । জোফিশ সাধারণ ৪-৫ ইঞ্চি
পর্যন্ত লম্বা হয়।
৯. যে মাছের হাত আছে
Image by John Turnbull from Flickr |
‘হাত
মাছ (Hand Fish)’ নামের মাছগুলোর বক্ষপাখনা দেখতে হাতের আকৃতি । বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত
এ ধরনের নয় প্রজাতির আবিষ্কার করেছেন । এদের আকৃতির মাছ (সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৫সে.মি.)
এবং সমুদ্রের তলদেশে থাকে । এদের অস্ট্রেলিয়া ও তাসমানিয়ার দক্ষিণ সমুদ্রে বেশি দেখতে
পাওয়া যায় ।সুন্দর এই মাছটির ত্বক অনেক বিষাক্ত যা খাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে শিকারির
প্রাণ নেয় ।
১০. যে মাছ সামনে-পিছনে সাঁতরাতে পারে
Image from wikimedia |
অবিশ্বাস্য
হলেও সত্যি ‘ব্ল্যাক গোস্ট’ নামের মাছটি সামনে-পিছনে সমান দক্ষতায় সাঁতার কাটতে পারদর্শী
। এই মাছগুলো দক্ষিণ আমেরিকার আমজন নদী ও এর তৎসংলগ্ন এলকাগুলোতে দেখতে পাওয়া যায় ।এদের
পুরো শরীর কালো তবে লেজের অংশ সাদা রঙের । এরা অন্ধকারে থাকতে ভালোবাসে ।
১১. রাক্ষুসে মাছ
Image from wikimedia |
‘পিরানহা’
মাছের নাম হয়ত আপনি আগেও শুনে থাকবেন । পিরানহা মাছ নিয়ে হলিউডে বেশ কয়েকটি মুভিও তৈরি
হয়েছে ।মাছগুলোকে রাক্ষুসে মাছ বলার কারণ এরা মাংশাসী । এদের দেখতে রূপচাঁদা মাছের
মত হলেও এদের দৈর্ঘ্য একটু বড় সাধারণত ১৪-১৫সে.মি. হয়ে থাকে । চোঁয়ালে থাকা ত্রিভুজাকৃতির
ধারালো দাঁত দিয়ে শিকারের গা থেকে মাংস ছিড়ে ফেলতে পারে ।এরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে শিকার করে
তাই অধিক আক্রমনাত্মক হয়ে থাকে । এরা দক্ষিণ
আমেরিকা ও আমাজন বনের নদী ও লেকগুলোয় এদের বসবাস ।
১২. যে মাছের মাথায় বাতি জলে
Image by Thomas Quine from Flickr
‘এংলার
ফিশ’ হচ্ছে এক বিস্মময়কর মাছ । এদের মাথা বেশ বড়, মুখের আকার চন্দ্রকার, মুখের ভেতর
সুঁচালো দাঁত । মাথার উপরে রয়েছে এক ধরনের লম্বা কাঁটা যার শেষ মাথায় রয়েছ ছোট বাতির
মত যা অন্ধকারে শিকার করতে ব্যবহার করে । এংলার মাছের স্ত্রী প্রজাতির থেকে পুরুষ প্রজাতি
মাছের আকার অনেক ছোট হয়ে থাকে । মজার ব্যাপার হচ্ছে, পুরুষ মাছেরা জটিল পরিপাতন্ত্রের
কারণে স্ত্রী মাছের সরনাপন্ন হয় । তারা স্ত্রী মাছের শরীরে পরজীবী হিসেবে সংযুক্ত হয়ে
থাকে ও এনাজাইম নিঃসৃত করে ।ফলে স্ত্রী মাছের সাথে দৈহিক সংযোগ ঘটে এবং রক্তনালির মাধ্যমে
বিভিন্ন পুষ্টিগুণ গ্রহণ করে বেঁচে থাকে ।
0 মন্তব্যসমূহ